বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সাবেক বিচারপতি মাইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন, ‘সত্য উদঘাটন’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনটি সম্প্রতি রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গুমের ঘটনার সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। কমিশন দাবি করেছে, কিছু বন্দি এখনো ভারতের জেলে থাকতে পারে এবং এর জন্য সরকারকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কমিশন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেছে যা গুমের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রথমটি হলো বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অপহৃত হয়ে ভারতীয় কারাগারে পৌঁছানো সুখরঞ্জন বালির ঘটনা, এবং দ্বিতীয়টি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘটনা।
২০১৫ সালে উত্তরায় আটক হওয়ার পর সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তাকে একটি পরিত্যক্ত সেলে আটক রাখা হয়েছিল, যেখানে মেঝেতে গর্ত ছিল যা টয়লেট হিসেবে ব্যবহৃত হত। তিনি আরও জানান, তাকে দেওয়া কম্বলটিতে ‘টিএফআই’ লেখা ছিল, যা “টাস্ক ফোর্স ফর ইন্টারোগেশন” এর নির্দেশক হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এবং ভারত সরকারের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হলো ২০১১ সালে র্যাব গোয়েন্দা শাখা তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে তিনজন বন্দী গ্রহণ করেছে। এছাড়া, কিছু বন্দীকে হত্যা করা হয়েছে এবং কিছু বন্দী জীবিত অবস্থায় অন্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কমিশন মনে করে যে, এই ঘটনা দুটি দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময় কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এবং সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয়ে ঘটেছে। তবে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আরও বিস্তারিত বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমের এই ঘটনাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ও আন্তঃসীমান্ত প্রকৃতি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। তবে, এর পেছনে ভারতের সম্পৃক্ততার প্রকৃত মাত্রা এবং দুই দেশের জন্য এর তাৎপর্য বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।