স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫৩ বছর পেরিয়ে গেছে। দেশের জন্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে জীবন দিয়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী কালীপুর কোকদন্ডীর বীর মুক্তিযোদ্ধ প্রফুল্ল ধর। একমাত্র মেয়ে বাসনা ধরকে নিয়ে ছোট্ট কুড়ে ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রফুল্ল ধরের স্ত্রী পারুল ধর।
বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের কোকদন্ডী এলাকার মৃত নবীন চন্দ্র ধরের ছেলে প্রফুল্ল ধর।
বাণীগ্রাম এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভ নাম পলকের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাতে ৩৬ নম্বর সিরিয়ালে প্রফুল্ল ধরের নাম থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সরকারি কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাননি বলে জানিয়েছেন ওই মুক্তিযুদ্ধার স্ত্রী পারুল ধর।
১৯৭১ সালে দেশের জন্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল ধর। যুদ্ধ চলাকালে রাজাকার বাহিনী প্রফুল্ল ধরের বসতঘর পুড়ে ছাই করে দেয়ার ফলে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন তাঁর পরিবার। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১০/১২ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে বাসনাকে নিয়ে কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলনা পারুল ধরের। নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকার ৩৬ নম্বর সিরিয়ালে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল ধরের নাম আছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ কোনো সরকারি সুবিধা পাননি তারা।
সরেজমিন গেলে এ প্রতিবেদককে দেখে কান্না শুরু করে দেন পারুল ধর ও মেয়ে বাসনা। এ সময় পারুল ধর বীর মুক্তিযোদ্ধার একটি তালিকা দেখিয়ে বলেন, এই তালিকায় আমার স্বামী প্রফুল্ল ধরের নাম আছে। কিন্তু ভাতা বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। যুদ্ধের সময় স্বামীকে হারিয়েছি। রাজাকাররা বসতঘর পুড়ে ছাই করে দিয়েছিল। ফলে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইও হারিয়েছিলাম। কোনো উপায় না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম।
পরে এলাকার লোকজন স্বামীর বসতভিটাতে এই কুঁড়ে ঘর বেঁধে দিয়েছিল। এখনো ওই কুঁড়ে ঘরে জীবনযাপন করছি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা ভাতাসহ সরকারি বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পেলেও সরকারি কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। তিনি আরও বলেন, অসহায়ত্বের জীবন-যাপন করলেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে গর্ববোধ করি। শহীদদের নামের তালিকা বুকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু পাচ্ছি না কোন ভাতা কিংবা সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা। এমনকি সম্মানও।
পারুল ধর আরোও বলেন, প্রফুল্ল ধর যুদ্ধকালীন সময়ে হানাদার বাহীনিদের হাতে নিহত হওয়ার পর থেকে তাদের জায়গা জমি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাবশালীরা জবর-দখল করে নিয়েছে, তাছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র তাঁদের বসতঘর ও জায়গা-জমি দখল করে নিচ্ছে। এসময় পারুল ধরের হাতে থাকা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঁশখালীতে সম্মূখযুদ্ধে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্তম্ভ (নাম পলকের) একটি তালিকায় দেখা যায় যুদ্ধে নিহত প্রফুল্ল ধরের নাম। কিন্তু তাঁর পরিবার কেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা থেকে দীর্ঘ ৫৩ বছর যাবত কেন বঞ্চিত সেটার উত্তর নেই কারো কাছে, নেই বঞ্চিত পরিবারের কাছেও।
এবিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আহমদ ছফা বলেন, বাণীগ্রাম ও কোকদন্ডী এলাকায় যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা অনেক মানুষকে হত্যা করেছিল আর ওইসময় নিহতদের সেখানে গণকবর দেওয়া হয়েছে। তবে সম্মুখ যুদ্ধে নিহত হওয়া আমরা বাঁশখালী থেকে ৩ জনের নাম তালিকায় দিয়েছি। এছাড়া আমার জানামতে সম্মুখ যুদ্ধে কেউ নিহত হয়েছে এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে যুদ্ধকালীন সময়ে কোকদন্ডী এলাকায় রাজাকারদের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিলো, সেখানে অনেকে নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই থাকতে পারে বলে জানান তিনি