বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
spot_img
শিরোনাম

১ কোটি ৩১ লাখ সনাতনী ধর্মের মানুষের জন্মাষ্টমী পরিষদ এ সংগঠন স্বৈরচারের দোসরদের কাছে নিরাপদ না

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের সনাতনী ধর্মীয় সংগঠন “শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ”–এর কেন্দ্রীয় কমিটি এ সংগঠন দেশের ১ কোটি ৩১ লাখ সনাতনীয় ধর্মের মানুষের সংগঠন। যা দেশের প্রায় ৮% জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী এক মাত্র সংগঠন। গত ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তন হওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের মত ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারণে অনেকের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত। বির্তবর্কিত ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত এবং বিগত ১৭ বছর ধরে যারা সনাতনীদের এ সংগঠনকে আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনের মত করে রাখছিল। আওয়ামী লীগ ছাড়া ভিন্নমতাদর্শী কোন সনাতনী লোকজনকে সদস্য পর্যন্ত করা হয়নি। যার কারণে এখন সারা দেশের সনাতনী ধর্মের সকল শ্রেণির মানুষের গণদাবি উঠেছে স্বৈরচারের দোসর এবং বির্তকিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা। আওয়ামী লীগ দলীয় লোকজন সংগঠনটি কৌশলে দখল করে নেয়ার অপচেষ্টা করছে এবং ভুয়া কমিটি দিতে
গঠনে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে বুধবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আজীবন সদস্য সৌরভ প্রিয় পাল।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জন্মাষ্টমী পরিষদ ১৯৮২ সাল থেকে গত ৪২ বছর ধরে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি বিশেষ রাজনৈতিক মহল জোরপূর্বক কমিটি গঠন করে সংগঠনের ঐতিহ্য ও নিয়মনীতি ভঙ্গ করেছে, যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও ধর্মীয় সংগঠনের মর্যাদার পরিপন্থী।
বক্তারা অভিযোগ করেন, গত ১১ জুন সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে একটি তথাকথিত কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়, তা পরিষদের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উক্ত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে নাম এসেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার চন্দন তালুকদার–এর। তাঁর বিরুদ্ধে আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলা, জুলাই অভ্যুত্থান, ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ষড়যন্ত্রসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে আর কে দাশ রুপু–কে, যিনি আওয়ামী রাজনীতির ঘনিষ্ঠ এবং স্বৈরাচারী সরকারের অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত। বক্তারা বলেন, ঘোষিত কমিটিতে পরিষদের ১,১২৫ জন তালিকাভুক্ত সদস্যের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, বরং বাইরের অপ্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের যুক্ত করা হয়েছে। যেমন—আজীবন বা দাতা সদস্য না হয়েও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অসীক দত্ত–কে কমিটিতে রাখা হয়েছে। এটি পরিষদের ধর্মীয় ভাবমূর্তি ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলার চরম অবমাননা।
বক্তারা আরও জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জে. এম. সেন হলে অনুষ্ঠিত হয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্কাইপির মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি সনাতনী সম্প্রদায়ের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। তবে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে একটি পক্ষ কমিটি গঠনের ষড়যন্ত্র করে। উপস্থিত সদস্যদের প্রবল বিরোধিতায় নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পদত্যাগ করেন ও কার্যক্রম বাতিল করা হয়।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে নেতৃত্ব শূন্যতার সুযোগে একটি পতিত রাজনৈতিক গোষ্ঠী স্বৈরাচারী কায়দায় পরিষদ দখলের অপতৎপরতায় লিপ্ত। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অস্ত্র প্রদর্শন ও হুমকি-ধামকি সাধারণ সনাতনী সদস্যদের নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা সুজিত কুমার বিশ্বাস মন্টু–কে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ কমিটি বাতিল করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়—
অবৈধ দখলদারদের অপসারণ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত, ধর্মীয় সংগঠনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ, সাধারণ সনাতনী জনগণের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

বক্তারা জানান, এই অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী সনাতনী সমাজ মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাৎ হোসেন-ও এই গণতান্ত্রিক দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছেন।
বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ” একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। একে কোনভাবেই আর রাজনৈতিক পুনর্বাসনের প্ল্যাটফর্ম বানাতে দেওয়া হবে না। সাংবাদিক সমাজের কাছে আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলেন, আপনারা যেন গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং ধর্মীয় স্বাতন্ত্র‍্যের পক্ষে থেকে আমাদের এই নায্য দাবীকে জাতির সামনে তুলে ধরেন।
অবিলম্বে গঠনতন্ত্র মেনে প্রকৃত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সংগঠনে ফিরিয়ে আনা হোক গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আজীবন সদস্য দোলন দেব, দীপক চৌধুরী কালু, ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় চক্রবর্তী মানিক, প্রশান্ত কুমার পান্ডে, অর্জুন কুমার নাথ, রাধেশ্যাম আচার্য্য, নারায়ন দাশ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুকান্ত তালুকদার জুয়েল, অপু চৌধুরী আকাশ, কেন্দ্রীয় সদস্য বিপ্লব চৌধুরী বিল্লু, মহানগর সদস্য সচিব বাপ্পী দে, দপ্তর সম্পাদক জীবন মিত্র রাজ, মিঠন রবি দাশ, সৈকত বোস, প্রভাস দাশ, রতন কান্তি নাথ, মিঠুন বৈষ্ণব, রয়েল কুমার পাল, সুব্রত আইচ, অরুপ দাশ, মিথুন কান্তি দাশ, রনি দাশ, পন্ডিত মিথুন আচার্য্য, রনি দাশ, উজ্জল পাল চৌধুরীসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলার অর্ধশতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ কয়েক শতাধিক সনাতনীয় সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ