সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ও মনোজাগতিক মুক্তি অর্জিত হয় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ বিনির্মাণে শাস্ত্রীয় সংগীত বা শুদ্ধ সংগীত চর্চা অত্যন্ত জরুরি। গত ১০ এপ্রিল বিকেল ৫টায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ত্রয়োদশ জাতীয় উচ্চাঙ্গসংগীত সম্মিলনের আয়োজন করে শ্রুতিঅঙ্গন।
পার্থ প্রতিম মহাজন ও মৌসুমী সেন-এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন শ্রুতিঅঙ্গনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রশিক্ষক শিল্পী লিটন দাশ। উদ্বোধকের বক্তব্যে খ্যাতিমান বংশীবাদক উস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম বলেন, মানবিক গুণাবলী বিকাশে এবং সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে শুদ্ধ সংগীত চর্চা এবং বিত্তবান ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অতীব প্রয়োজন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে সংগঠনের নবনিযুক্ত সভাপতি সুজিত ভট্টাচার্য দোলন বিগত বছর সংগঠনের প্রয়াত সভাপতি ড. জীবন চন্দ্র পাল, লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ, আজীবন সদস্য কবিয়াল অশ্বিনী দাশ, ডা. সন্দীপন দাশ ও পূর্বের সভাপতি প্রফেসর বেনু কুমার দে মহোদয়ের সংগঠনে অবদানের কথা তুলে ধরেন এবং সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যবসায়ী ও সংগীতশিল্পী রিয়াজ ওয়ায়েজ বলেন, সকল শুদ্ধ সংগীত চর্চাকারী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোকে সবার সহযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে পারলে সমাজ ও দেশ সমৃদ্ধ হবে এবং মানবিক গুণসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি হবে। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম।
দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে মঙ্গলদ্বীপ প্রজ্বলন এবং সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমানের রচনায় ও লিটন দাশের সংগীতায়োজনে সম্মেলক সংগীত পরিবেশন করেন শ্রুতিঅঙ্গনের শিল্পীবৃন্দ। ভৈরব রাগে “ভোর হলো ওঠো রে পাখি গান গায় ফুলকলি বাতাসে সুবাস ছড়ায়”, কিরোয়ানী রাগে “কর্ম সাধনায় হও মনযোগী উদার হৃদয়ে হও জ্ঞানভোগী”, পণ্ডিত ড. স্বর্ণময় চক্রবর্তীর রচনায় ইমন রাগে তারানা এবং লিটন দাশের রচনায় মিশ্র কিরোয়ানী রাগে স্বরমালা পরিবেশন করা হয়। তবলায় ছিলেন অমর্ত্য চক্রবর্তী।
এরপর মিয়াঁ কি মল্লার রাগে ধ্রুপদ পরিবেশন করেন প্রণিতা দেব, পাখোয়াজে ছিলেন ত্রিদীপ কুমার বৈদ্য। তাঁদের পরিবেশনা দর্শক মনোযোগ সহকারে উপভোগ করেন।
ভূপালী রাগে বিলম্বিত একতাল ও ত্রিতাল খেয়াল পরিবেশন করেন সম্ভাবনাময় কিশোরী শিল্পী মনস্বিতা চৌধুরী। তবলায় সহযোগিতা করেন অমর্ত্য চক্রবর্তী, তানপুরায় ছিলেন রাজু তালুকদার ও নিপা দত্ত এবং হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন তার সংগীতগুরু লিটন দাশ। তাঁর পরিবেশনায় দর্শকের মধ্যে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে এবং নিয়মিত রেওয়াজের ছাপ প্রতিভাত হয়।
এরপর সমবেত উচ্চাঙ্গনৃত্য ‘ভরতনাট্যম’ পরিবেশন করেন সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ ডান্স একাডেমির ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। পরিচালনায় ছিলেন নৃত্যশিল্পী হিল্লোল দাশ সুমন। পরিবেশনায় দর্শকরা মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে শিল্পীদের উৎসাহিত করেন।
চারুকেশী রাগে যন্ত্রসংগীত সারেঙ্গী পরিবেশন করেন ঢাকার শিল্পী শৌণক দেবনাথ ঋক। তবলায় সহযোগিতা করেন অমর্ত্য চক্রবর্তী ও প্রাত দাশ। এই পরিবেশনা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
সমবেত তবলা লহরা পরিবেশন করেন ‘রেওয়াজ’-এর ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। পরিচালনায় ছিলেন পণ্ডিত সুদীপ সেনগুপ্ত। এই পরিবেশনা ছিল অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, যা শ্রোতাদের আনন্দে ভাসায়।
এরপর মঞ্চে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. অসিত রায়। তিনি বিলম্বিত একতাল ও ত্রিতালে কলাবতী রাগে খেয়াল, তারানা, ঝোর, ঝালা পরিবেশন করেন। তবলায় ছিলেন সুমন মজুমদার এবং হারমোনিয়ামে লিটন দাশ। তাঁর পরিবেশনা এতটাই উচ্চমার্গীয় ছিল যে দর্শক-শ্রোতারা করতালির বন্যায় সাড়া দেন।
সবশেষে সমবেত পটদীপ রাগে খেয়াল পরিবেশন করেন কলাবন্তী সংগীত একাডেমির ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। পরিচালনায় ছিলেন মিতালী রায়। এত সুন্দর আয়োজনের জন্য দর্শকরা শ্রুতিঅঙ্গনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।