ফটিকছড়ি উপজেলা সম্প্রতি এক নতুন সমস্যা নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। চুরি, ছিনতাই, অপহরণ এবং গবাদি পশু চুরির ঘটনা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে। ঝংকার মোড়, ফটিকছড়ি পৌরসভা, বিবিরহাট বাজার, ভূজপুরসহ উপজেলাজুড়ে ১৫-২০টি স্থানে প্রতিনিয়ত এসব অপরাধের শিকার হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, দিন-রাত এই ধরনের অপরাধ চলতে থাকায় তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সম্প্রতি এসব ঘটনার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। বাগানবাজারের মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমদ মাস্টার জানান, গত ১২ জানুয়ারি রাতে তার বাড়িতে অবস্থিত গোডাউন থেকে ১০০০ কেজি এবং তার পূর্বে ৫০০ কেজির উপরে রাবার চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া রাবারের বর্তমান মূল্য প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। তিনি জানান, তার কারখানায় তিনজন শ্রমিক কাজ করে এবং তাদের বেতন কীভাবে পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে তিনি ভূজপুর থানায় ১৪ জানুয়ারি একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নাজিরহাট পৌরসভার ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন জানান, একদিন বিকেলে বাজারে যাওয়ার পথে কয়েকজন যুবক তার পথ রোধ করে ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। বেসরকারি চাকরিজীবী আইয়ুব আলীও ১৪ জানুয়ারি রাতে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার সময় ছিনতাইয়ের শিকার হন। তার মোটরসাইকেল থামিয়ে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। গৃহকর্মী আছমা বেগমও বাজারে যাওয়ার সময় একদল যুবকের দ্বারা আক্রান্ত হন; তারা তার গলায় থাকা চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
১৬ জানুয়ারি রাতে ফটিকছড়ি পৌরসভার কৃষক ইউসুফ ও বদিউল আলমের ছয়টি গরু চুরি হয়ে যায়। এই গরুগুলোর বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা।
অপরদিকে, দাঁতমারা ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং আওয়ার ফটিকছড়ি সফটওয়ারের সিইও মুন্না জানান, ২০ জানুয়ারি সকালে হেয়কোর বেক বাজার থেকে তার ভাইকে কে বা কারা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে শান্তিরহাট এলাকায় তাকে ফেলে রেখে যায়। ঘটনার সময় মাইক্রোবাসে আরও দুইটি শিশুকে দেখা গেছে। এই ঘটনার পর তাদের পরিবার চরম আতঙ্কে রয়েছে।
স্থানীয়রা দাবি করছেন, পুলিশি টহল বাড়ানো এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন। তাদের মতে, পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে অপরাধ প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। নাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মো. রাশেদ সুজন এবং ভূজপুরের বাসিন্দা সাহেদুল আলমের মতো কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন, তারা সরকারের পরিবর্তনের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নতির আশা করেছিলেন, কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমেদ জানিয়েছেন, পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, খুব শিগগিরই এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, ততক্ষণ তারা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হবেন।