বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
spot_img
শিরোনাম

কক্সবাজারের মাতামুহুরী নদীর রাবার ড্যাম ফুলাতে দেরি, কৃষকদের সেচ সংকটে উদ্বেগ

এসএম হান্নান শাহ চকরিয়া

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ৫৩ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত প্রমত্তা মাতামুহুরী নদীতে ২০০৯ সালে স্থাপিত দুইটি রাবার ড্যাম কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিতে প্রতিবছর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফুলানো হলেও চলতি ডিসেম্বর মাসেও সচল করা হয়নি। এ অবস্থার কারণে  কক্সবাজার চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার হাজারো কৃষক চলতি রবি মৌসুমের  শীতকালীন শাকসবজি খেতে যথাসময়ে সেচ দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।

রাবার ড্যাম দুটি ফুলাতে এবার দেরি হওয়ায় দুই উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় সেচ সংকটে চাষাবাদ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন স্থানীয় স্থানীয় কৃষকেরা। এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছে, জনবল সংকট থাকায় এ বছর টেন্ডার দিতে দেরি হয়েছে। তাই যথাসময়ে ড্যাম দুটো ফুলানো সম্ভব হয়নি।

মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবছর নভেম্বরের মাঝামাঝি রবি মৌসুমে বোরো ও শীতকালীন শাকসবজি চাষ শুরু হয়। চাষে সেচ সুবিধা নিশ্চিতে কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে পাউবো কর্তৃক নির্মিত পালাকাটা ও বাঘগুজারা রাবার ড্যাম দুটি ফোলানো হয়। কিন্তু এ বছর মৌসুম শুরু হলেও এখনো রাবার ড্যাম দুটি ফোলানোর কাজ শুরু করেনি পাউবো। এতে করে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বোরো ও শীতকালীন শাকসবজি চাষে মিঠা পানির সংকট তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। চাষে বিলম্ব হলে এসব উপজেলায় খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি রবি মৌসুমে চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ২১ হাজার ২০ হেক্টর ও পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নে ৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ ও শীতকালীন শাকসবজি আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে মাতামুহুরী নদীতে চকরিয়া-পেকুয়ার মোহনায় বাঘগুজারায় এবং চকরিয়ার চিরিংগা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা পালাকাটায় দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। এর আগে ২০০৩ সালে পেকুয়ার ভোলা খালে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। এই তিনটি রাবার ড্যাম নির্মাণের পর প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে দুই উপজেলায় চাষাবাদ হয়ে আসছে। প্রতিবছরের ইরি-বোরো মৌসুম শেষে মে মাসের শুরুর দিকে রাবার ড্যামগুলোর রাবার ব্যাগ নামিয়ে দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলা কৃষি বর্গাচাষি সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন পুতু বলেন, মাতামুহুরী নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ঠিকমতো সেচ দিতে পারছে না কৃষকেরা।  যথাসময়ে মাতামুহুরী নদীর দুটি রাবার ড্যাম ফুলানো গেলে চাষের সেচ (পানি) সুবিধা নিয়ে বেগ পেতে হতো না কৃষকদের।

তিনি  বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাবার ড্যাম ফোলানো না হলে নদীর মিঠাপানি আটকানো যাবে না। এমনকি জোয়ারের সময় উলটো সামুদ্রিক  লবণাক্ত পানি স্লুইসগেট দিয়ে ছড়া ও খালে চলে আসবে। কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম নাসিম হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে রবি মৌসুম শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় সেচ সংকটের আশঙ্কা থেকে  পালাকাটা ও বাঘগুজারা রাবার ড্যাম ফুলানোর জন্য প্রতিদিন কৃষকেরা আমার অফিসে এসে দাবি জানাচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত সময়ে রাবার ড্যাম দুটি  ফোলানো না হলে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, মাতামুহুরী নদীর  দুটি রাবার ড্যামের বর্তমান অবস্থা কৃষি, বিএডিসি ও পাউবোর কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিদর্শন করা হয়েছে। রাবার ড্যাম গুলো দ্রুত সময়ে ফোলানোর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, মাতামুহুরী নদীর রাবার ড্যাম দুটি ফোলানোর জন্য গত ৫ ডিসেম্বর টেন্ডার হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে যে  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে, তারা কাজ শুরু করবে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, অল্পসময়ের মধ্যে রাবার ড্যাম দুটি ফুলানোর জন্য। যাতে কৃষকেরা কোন অবস্থাতে সেচ সুবিধা নিয়ে সংকটে না পড়ে।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ