বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
spot_img
শিরোনাম

হালদায় ডিম সংগ্রহকারীদের চলছে নৌকা ও জরাজীর্ণ হ্যাচারী সংস্কার।

জাহেদুল আলম জাহিদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম।

বাংলা চৈত্র মাস শেষ হয়ে চলছে বৈশাখ। এই সময় বুকভরা আশা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে হালদা নদীর শত শত ডিম সংগ্রহকারী। গেল বছর পর্যাপ্ত ডিম না পাওয়ায় অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কেউ কেউ এখনও সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেননি। ফলে অনিশ্চয়তায় থাকলেও এবারে নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মিঠা পানির মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে প্রতি বছর মে থেকে জুন মাসে পরিবেশ অনুকূলে থাকলে পূর্ণিমার জো’তে রুই, কাতলা ও মৃগেল জাতের মা মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময় হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার শত শত ডিম সংগ্রহকারী নদীতে নেমে ডিম সংগ্রহ করে। এসব ডিম হ্যাচারিতে নিয়ে প্রথমে রেণু ও পরে পোনা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন জেলার মৎস্যচাষীদের নিকট বিক্রি করা হয়।

এ কাজে খরচ মিটিয়ে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকলেও লাভ ভাগ করে নেওয়ার কারণে এককভাবে লাভ কমে যায়। তবুও এবারও কয়েকশ ডিম সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ উপলক্ষে নৌকা মেরামতের কাজ চলছে পুরোদমে।

কেউ নিজস্ব নৌকা, কেউবা একাধিক নৌকা ভাড়া করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার কেউ নিজেরা ডিম সংগ্রহে অংশ না নিয়ে, নৌকা ভাড়ার উদ্দেশ্যে নৌকা মেরামত করছেন। রামদাশহাট, মাছুয়াঘোনা ও গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর পাড়ে কিংবা বাড়ির পাশে নৌকা মেরামতের ব্যস্ততা।

মাছুয়াঘোনা স্লুইসগেট সংলগ্ন নদীর পাড়ে ডিম সংগ্রহকারী মো. নাজিম বলেন, তিনি তিনটি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করবেন। নিজের দুটি ছাড়াও সাড়ে ছয় হাজার টাকায় একটি নৌকা ভাড়া নিয়েছেন। নৌকার কাজ শেষ হলে জাল, কাঁচি, নোঙরসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে হবে। সবমিলিয়ে খাওয়াদাওয়াসহ কয়েক হাজার টাকা খরচ হবে।

৬৮ বছর বয়সী অভিজ্ঞ সংগ্রহকারী মো. লোকমান বলেন, ছয়টি নৌকা নিয়ে নদীতে থাকবেন। নিজের কোনো নৌকা না থাকায় ৭ হাজার টাকা করে মোট ৪২ হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া নিয়েছেন। তার সঙ্গে থাকবে ছেলে ও আরও ১০ জন, যারা চার আনা শেয়ারে অংশীদার হবে। খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্বও তার। সরঞ্জামসহ মোট এক লাখ টাকার মতো খরচ হবে বলে জানান তিনি।

গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকার কামাল সওদাগর বলেন, তাঁর আটটি নৌকার মধ্যে চারটি প্রস্তুত রয়েছে, বাকিগুলো মেরামত করছেন। মেরামতের খরচ পড়ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা, পুরো মৌসুমে খরচ হবে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তিনি নদীর পানি ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে বলেন, “এবার লক্ষণ ভালো। নদীর ঘোলা পানি মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। পূর্ণিমায় প্রথম জো’তেই ডিম ছাড়বে।”

তবে মাছের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “আগস্টের পর থেকে নদীতে থাকা অধিকাংশ মা মাছ অবৈধ শিকারীদের জালে পড়ে গেছে। দেশের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জাল, বর্শি এবং বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন চলছে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে।”

এদিকে ডিম সংগ্রহের পর রেণু উৎপাদনের জন্য মাছুয়াঘোনা ও মদুনাঘাট হ্যাচারিগুলো দ্রুত সংস্কার করা হচ্ছে। মাছুয়াঘোনায় দেখা গেছে, পুরোনো টিন সরিয়ে নতুন টিন লাগানো হচ্ছে। ৩০টি কুয়া পুরোদমে সংস্কার করা হচ্ছে, ১৬টি কুয়ায় আংশিক কাজ চলছে। আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “মা মাছের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। আশা করছি, আগামি পূর্ণিমার প্রথম জো’তেই ডিম ছাড়বে। হালদার পরিবেশ অনুকূল রয়েছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, “ডিম সংগ্রহে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা হচ্ছে। নদীসংলগ্ন উপজেলার ইউএনও, মৎস্য কর্মকর্তা ও নৌ পুলিশ মা মাছ রক্ষায় কাজ করছে। অভিযানও জোরদার করা হয়েছে। আশা করছি, এবার ভালো ডিম সংগ্রহ সম্ভব হবে।”

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ