করোনকালিন সময় থেকে প্রাণহীন হয়ে পড়া চট্টগ্রামের সংস্কৃতিক অঙ্গন। দীর্ঘদিন দিরে সংস্কৃতিক অঙ্গণের ভাটার জোয়ার আনার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম সংগীত উৎসবের মাধ্যমে সংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন করে জোয়ার এসেছে বলে উপস্থিত দর্শক এবং সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানান।
অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সঙ্গীত উৎসব ২০২৪ আয়োজিত হয়েছে। কয়েক শত দর্শকদের মানুষের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল অনুষ্ঠানস্থল। শুক্রবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মুক্তমঞ্চে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার।
এর আগে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্বশীল ৩২টি সঙ্গীত সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে গঠিত ‘চট্টগ্রাম সঙ্গীত সংগঠন মোর্চা’র প্রতিনিধিদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো মানুষদের জন্যই সংস্কৃতি টিকে আছে উল্লেখ করে দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, ‘আমাদের বাঙ্গালির আবহমান যে সংস্কৃতি সেটা ধরে রাখতে কিছু মানুষ ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। এজন্য তারা সমাজের বিভিন্নজন থেকে নানা কটু কথা শুনে। তবুও তারা দমে যায় না। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
চট্টগ্রামের সঙ্গীত সংগঠনগুলো অনেকদিন ধরেই আলাদা ভাবে প্রোগ্রাম করছিল। এ মোর্চার মাধ্যমে চট্টগ্রামের সঙ্গীত সংগঠনগুলো যৌথভাবে কাজ করার একটি ক্ষেত্র পাবে। মোর্চা করতে গিয়ে মাঝে মাঝে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। সেটা না হলে এ মোর্চা টিকে থাকবে। নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, ‘আজ একটি আনন্দের দিন। এভাবে আমাদের সবাইকে জোটবদ্ধ হতে হবে। সব আন্দোলন সংগ্রামে যাতে চট্টগ্রামের এ ৩২টি সংগঠন একসঙ্গে কাজ করতে পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আজ চট্টগ্রামের শহীদ মিনার নিয়ে বলার কেউ নেই। যারা এটির ডিজাইন করেছে তারা কিছু জানে না। ইচ্ছেমতো ডিজাইন করে চট্টগ্রামের মানুষের আবেগে আঘাত দিয়েছে। যে ভুলটা তারা করেছে সেটা স্বীকার করে জবাবদিহিতা করতে হবে। চট্টগ্রামের সংস্কৃতি কর্মীদের এ আন্দোলনে সামনে এগিয়ে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম সঙ্গীত সংগঠন মোর্চার আহ্বায়ক কল্পনা লালার সভাপতিত্বে ও জাবেদ হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক মানস শেখর ও সদস্য সচিব শীলা দাশগুপ্তা।
আলোচনা পর্বের পর শুরুতেই মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করে সঙ্গীত ভবন, কলাবন্তী একাডেমি,স্বরলিপি সাংস্কৃতিক অঙ্গন, সারগাম সংগীত পরিষদ, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা, গীতধ্বনি সংগীত অঙ্গন, বিবেকানন্দ সংগীত নিকেতন, বিশ্বতান, নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা ও ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ।
এরপর একে একে সঙ্গীত পরিবেশনা করে সংগীততীর্থ, অদিতি সঙ্গীত নিকেতন, রক্তকরবী, সুরধ্বনি সাংস্কৃতিক অঙ্গন, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, নজরুল কালচারাল একাডেমি, লালন পরিষদ, শ্রুতিনন্দন, রাগেশ্রী, স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম, দেবাঞ্জলী সংগীতালয়, উদীচী চট্টগ্রাম, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, ঠুমরী সংগীতালয়, কালচারাল পার্ক রাউজান, পূর্বা, ফতেয়াবাদ সংগীত নিকেতন ও ইমন কল্যান সংগীত বিদ্যাপীঠ। চট্টগ্রাম সঙ্গীত সংগঠন মোর্চার ৩২সংগঠনের প্রতিনিধিদের হাতে ফুল ও স্মারক তুলে দেন অতিথিরা। লালন পরিষদ চট্টগ্রাম টিমে অংশ নেন ললন পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক লুপর্ণা মুৎসুর্দ্দী লোপা, সংগীত শিল্পী চন্দনা চক্রবর্ত্তী, জয়দাশ দিপ্ত,ছৈয়দা হুজ্জাতুন নুর,মাজাহার, জিমসহ অনেকে।
৩২টি সংগঠনের মধ্যে সব চেয়ে সুন্দর পরিবেশন ছিল লালন পরিষ চট্টগ্রাম বিভাগের টিমের পরিবেশন। বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সাংবাদিক জামশেদ উদ্দীন বলেন, এখনো যতগুলো সংগঠন পরিবেশন করেছে সব চেয়ে ভালো লেগেছে লালন পরিষদের পরিবেশন চমৎকার হয়েছে, আমার দৃষ্টিতে সব চেয়ে সেরা তারাই করেছে।
বিশিষ্ট নাট্যকার রতন চক্রবর্ত্তী বলেন, সংগীত উৎসবটি প্রয়োজন ছিল, তবে শহরের সংগঠনগুলোর চেয়ে গ্রামের সংগঠনগুলোকে আমন্ত্রণ জানালে ভালো হত, তবে আমার দৃষ্টিতে যে সংগঠন পরিবেশ করেছে সবগুলো ভালো করেছে, তবে লালন পরিষদের পরিবেশনটা সবার চেয়ে ভালো আমার ভালো লেগেছে।
লালন পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের সাধারণ সম্পাদক লুপর্ণা মুৎসুর্দ্দী লোপা বলেন, এখনো যারা অংশ নিয়েছে তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত পরিচিত শিল্পী এবং সংগঠন। সবাই নিজ নিজ জায়গায় পরিচিত। আমরা চেষ্টা করছি এটা অনুষ্ঠানকে প্রতিযোগিতা হিসেবে সবাইকে নিয়ে টানা কয়েকদিন ধরে চর্চা করে আসছে এতে দর্শকদের ভালোবাসায় প্রমান হয়েছে আমরা চেষ্টা করে সফল হয়েছি।