আওয়ামী শাসনের অবসান হলো, কিন্তু রাঙ্গুনিয়ার বালু শাসনের অবসান হয়নি। যেখানে নদীর তীর রক্ষার নামে গত ১৬ বছরে হাসান মাহমুদের সোনার খনি খ্যাত বালু বানিজ্যে কামিয়েছে হাজার কোটি টাকা। রাঙ্গুনিয়ার ১১টি বালু মহাল ও কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং স্তুপকৃত বালুর যেই ১৫% পারসেন্ট হাসান মাহমুদের প্রধান আয়ের উৎস ছিল, তা এখন রাঙ্গুনিয়ার ইউএনওর পকেটে গরগড় করে ঢুকেছে বলে পুরো উপজেলা জুড়ে গুনঞ্জন চলছে।
গত ১৬ বছরের রাজত্ব ও হাজার কোটি টাকার বালু বানিজ্যের অবশিষ্ট ফেলে চলে গেলেও সই রাজত্ব এখন বিএনপি নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের ধারাভাষ্যমতে, রমরমা বালু বানিজ্যে এখন ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৫/৬ শতাধিক বিএনপির নেতা, পাতিনেতা ও কর্মী জড়িয়ে পড়েছে। এই বানিজ্যে এখন রাঙ্গুনিয়ার মাঠে-ময়দানে বিস্তৃতি লাভ করায়, দলীয় রাজনীতি ফেলে মনোযোগী হয়েছে বালুর রাজনীতিতে। এখন রাঙ্গুনিয়া হয়ে উঠেছে “টপ অফ দ্যা কান্ট্রি রাঙ্গুনিয়ার বালু”।
নেতা কর্মীদের মুখে মুখে দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগ খেয়েছে, আমরা উপোস ছিলাম—এখন তা বিএনপির কর্মীরা খাবে। আগে ২/১ জনে একা খেত, সেদিন এখন শেষ। অনেক দিন পর আমরা যেমন সুযোগ পেয়েছি, তেমনি কাজে লাগিয়েছি এবং ইজারা হাতবদল করে সবাই মিলেমিশে খাচ্ছি। তাই রাঙ্গুনিয়ার ইউএনওর পকেটে ভরেছে হিসাব-নিকাশ এদিক-ওদিক করে। এতে তিনিও কামিয়েছেন কোটি টাকা, আমরাও কাজ নিতে পেরেছি, সামনে টাকা কামাবো বালু বানিজ্য করে।
কিভাবে ইউএনও এত টাকা কামাই করেছে, তার প্রশ্নের ক’জন বিএনপি-যুবদল নেতা প্রতিবেদককে জানান, প্রতিটি জব্দকৃত বালুর স্তুপ প্রকৃত পরিমাপের চেয়ে কম দেখানো হয়েছে। প্রতি ঘনফুট বালু বর্তমান বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়, সেখানে তার রাজস্ব দেখানো হয়েছে নামমাত্র। যা সম্পূর্ণ সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার মতো বলে, পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বেলা’, ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ ও ‘ইছামতি নদী রক্ষা কমিটি’ পক্ষথেকে অভিযোগ করে জানিয়েছেন।
অপরদিকে, বিএনপি-যুবদলের দুই ত্যাগী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু ব্যবসার সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বলেন, তাদের মতে, এসি ল্যান্ড-ইউএনও স্তুপকৃত বালুর কোন সীমানা নিদিষ্ট না করে বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সাথে আতাত করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার পুনরায় প্রদান করেন।
আমরা যতটুকু জেনেছি, জব্দকৃত বালু ছাড়া নতুন করে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের আইনি অনুমতি নেই। কিন্তু বর্তমান বদলি ইজারাদার ইউএনওর ইশারায় অবাধে বালু তোলা হচ্ছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র অভিযোগ করেছে।
আরও অভিযোগে জানাযায়, সাবেক ছাত্রলীগের সরফভাটা ইউপির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক শওকতুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু—মন্ত্রী হাসান মাহমুদের ভাই এরশাদ মাহমুদের যোগসাজস এখনো বালু সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই বালু ব্যবসাকে ঘিরে গত ২ মাসে খুন হয়েছে ২ জন। প্রতিদিন বালু ব্যবসার অন্তরালে চলছে হিংসা-প্রীতি হিংসার রাজনীতি। যেকোন মুহূর্তে বালু ব্যবসাকে ঘিরে আরও প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সরফভাটায় এক সফরে কবর জিয়ারত শেষে এক সংক্ষিপ্ত সভায়, মামুন হত্যার ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে বলেন, তিনি রাঙ্গুনিয়া থেকে বালু ব্যবসা চিরতরে বন্ধ করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি ও ঘোষণা দিলেও কিন্তু কে শোনে কার কথা।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাযায়, বিগত বছরে রাঙ্গুনিয়ার এমপি হাসান মাহমুদ তার অবৈধ আয়ের টাকা হালাল করতে বালু মহাল তৈরির নির্দেশনা দেন। উপজেলা ভূমি অফিস সেই মন্ত্রীর কথায়, নতুন নতুন প্রকল্প সৃষ্টি করেন। শিলক খালের ইতিপূর্বে নামমাত্র যেকটি বালু মহালের কূপ ছিল, তা প্রশস্ত করে বিশাল আকারে রূপ দেয়া হলো। গত ১৬ বছরে কামিয়ে নিল কয়েক হাজার কোটি টাকা। সেসব প্রকল্পের মধ্যে অবৈধ টাকা কামানোর প্রধানতম হচ্ছে এই বালু মহাল। তাছাড়া দেখাগেছে, গত ১৬ বছর ধরে নতুন নতুন বালু মহাল সৃষ্টি করে শতাধিক পয়েন্টে বালু তোলার মহোৎসব চলেছে; তার পরিসংখ্যান লেখা শেষ করা যাবে না। বালু ইজারা নিয়ে ভিতরে ভিতরে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আত্মীয়তার কারণে গুটি কয়েক বিএনপি নেতাকর্মী পূর্ব থেকে জড়িত ছিল, যাদের দ্বারা পুনরায় ব্যবসা পরিচালিত হতে দেরি হয় নাই।