রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
spot_img
শিরোনাম

মেঘনা পেট্রোলিয়ামের আওয়ামীপন্থি সিবিএ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানী খাতের মাফিয়া বিগত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এমপি মন্ত্রী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম দুর্নতিতে জড়িয়ে পড়েন মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি নির্যাতন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর কাজে জড়িত ছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিএনপি-জমায়াতসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থা নিয়েছিল হামিদুর রহমান। ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলা, নির্যাতন গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে হামিদুর রহমানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত একাধিক মামলার আসামি। তথ্য গোপন করে বিএনপি-জামায়াত সেজে ২৬ এপ্রিল জামিন শুনানি রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালতে শুনানির দিন নির্ধরণ করা হয়েছে। এ বিষয়টি বিএনপি-জামায়াতসহ দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
নগরীর পাঁচলাইশ ও সদরঘাট থানায় বিষ্ফোরকসহ বিভিন্ন ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে জ¦ালানী খাতের মাফিয়া চক্রটি আওয়ামী লীগের আমলে জাতীয় শ্রমিক লীগের অর্ন্তভুক্ত মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হলেও এখন জাতীয়তাবাদী দলের অঙ্গসংগঠনের কর্মি বেশ ধারণ করে চেষ্টা করছেন।
চট্টগ্রাম আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আওয়ামীপন্থি সিবিএ নেতাদের ভোল পালটে জাতীয়তাবাদী সাজার চেষ্টা মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেও মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে । জুলাই-আগস্টে তীব্র ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নগরীর সিটি কলেজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী মাশফিকুর রহমান শান্ত নামের এক শিক্ষার্থী সদরঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, সহ সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ওরফে আকবর, দফতর সম্পাদক বাবু রনি কর, সদস্য রাজীব ধরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া রয়েছেন কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইউসুফ আলী, মো. আয়ুব। সদরঘাট থানার মামলায় তারা হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নেন। গত ১০ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমানকে সবাই আওয়ামীপন্থি সিবিএ নেতা হিসেবে চিনলেও তাকে জামিন আদালতে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সদস্য ও চন্দনাইশ উপজেলা বরমা ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ করা হয়েছে।
জামিন আবেদনে উল্লেখ করেছেন- ‘মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের সদস্য হন। হামিদুর রহমান মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বরমা ইউনিয়ন শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাবেক সদস্য এবং চট্টগ্রাম আইন কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত সাবেক সমাজ কল্যাণ ও অ্যাপ্যায়ন সম্পাদক পদে নিয়োজিত ছিলেন। ইহাতে স্পষ্ট যে, আসামী মেঘনা পেট্র্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের জড়িত এবং কোন প্রকার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সহিত জড়িত নয়। আসামীরা জাতীয়তাবাদী আদর্শের ব্যক্তি হওয়া স্বত্ত্বেও মিথ্যাভাবে উক্ত মামলায় জড়ানো হয়েছে। মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের নথি ঘেটে দেখা যায়, শ্রমিক লীগ নেতা হিসেবে ২০২৪ সালের ৬ জুলাই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করছেন মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আইয়ুব, সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, সহ সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ওরফে আকবরসহ অনেকে। ২০২২ সালের ২০ জুন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে হামিদুর রহমানকে মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ঘোষণা করে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে পত্র দিয়েছিলেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের একাধিক মন্ত্রী, এমপি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ একাধিক নেতার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ এলাকা থেকে শ্রমিকলীগ নেতা হামিদুর রহমানকে পুলিশ আটক করে। বিএনপি দলীয় কিছু নেতাকে টাকার বিনিময়ে থানায় প্রভাব খাটিয়ে ছাড়া পান। বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালিন সিএসপির উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ আলী হোসেনতে গত ১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু সাঈদের স্বাক্ষর করা এক আদেশে তাকে ট্যুরিস্ট পুলিশে বদলি করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা হামিদুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও মোবাইলে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জøালানী খাতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা আলমগীর হোসেন জুয়েল বলেন, হামিদুর রহমান আওয়ামী লীগের একজন স্বক্রিয় কর্মী বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লুটপাট করেছে। এখন আওয়ামী লীগ দেশ থেকে হাওয়া হয়ে যাওয়ায় কিছু সুবিধাবাদী বিএনপি নেতা কর্মীদের টাকার বিনিময়ে হাত করে বিএনপি সাজতে মরিয়া এটা দলীয় নেতা কর্মীরা মেনে নিবে না। উনার অপরাধের জন্য শাস্তি হওয়া দরকার উনার নির্যাতনে সাধারণ কর্মকর্তা, শ্রমিক কর্মচারীরা অতিষ্ঠ বলে তিনি দাবি করেন।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ