ঈদ পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মানুষ কর্মস্থলে ফিরছে। পুলিশের সুশৃঙ্খল তত্ত্বাবধানে এবারের ঈদযাত্রা ছিল প্রায় নির্বিঘ্ন, যানজটবিহীন ও নিরাপদ। তবে ছুটি শেষে ফেরার সময় মহাসড়কে চিত্রটা ভিন্ন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের নামে হয়রানি ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা রিজিওনের আওতাধীন মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশের এটিএসআই, এএসআই ও কনস্টেবলরা দায়িত্ব পালন করছেন। তারা স্পিড গানের মুখে গাড়ি তাক করে রেখে অভিযোগ করছেন “ওভার স্পিড”-এর। এরপর দর-কষাকষি করে টাকা নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন। গাড়ি না থামালে মামলা, আর টাকা দিলে রফা—এমন অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন একাধিক চালক।
অথচ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৪৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা বা জরিমানা করার জন্য সার্জেন্ট বা এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এএসআই ও এটিএসআইরাই মামলা করছেন এবং তাৎক্ষণিক রফার মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছেন, যা স্পষ্ট আইন লঙ্ঘন।
গাড়িচালক সাইফুল ও আশরাফুল অভিযোগ করে বলেন, “ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় শৃঙ্খলা আনার বদলে জট তৈরি করছে। অকারণে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখে, টাকা ছাড়া ছাড়ে না।”
কুমিল্লা রিজিওনের থানা ও ট্রাফিক বিভাগের অধীনস্থ কর্মকর্তারা সার্জেন্ট ও এসআইয়ের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন, যা আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ বেআইনি। পুলিশের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—“যদি এএসআই বা এটিএসআই-ই মামলা করতে পারেন, তবে সার্জেন্ট বা এসআই পদ রাখার প্রয়োজন কী?”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যের কারণে পুরো বিভাগটি বদনামের মুখে পড়েছে। আইন ভঙ্গ করে যারা এসব অপকর্মে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় মামলা করে বিচার করা উচিত। এতে সাধারণ মানুষ হয়রানি থেকে বাঁচবে এবং পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরবে।”
বাংলাদেশ জাতীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন (চট্টগ্রাম-সিলেট পূর্বাঞ্চল) কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা বহুবার প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। সড়কে চাঁদাবাজি কমলে যাতায়াত খরচ কমবে, পণ্য পরিবহন খরচ কমবে, ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দামও কমে আসবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, “আইন ভঙ্গ করলে মামলা করা হয়। তবে কেউ যদি পুলিশের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ চাঁদা আদায় করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) খাইরুল বশরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।