শুভ মধু পূর্ণিমা। বৌদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসে এটি অন্যতম এক শুভ তিথি। এখন চলছে বৌদ্ধদের বর্ষাবাস । বিশেষ করে বর্ষাবাসের ভাদ্র পূর্ণিমায় এটি উদযাপিত হয়। ভাদ্র মাসে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। তাই এর অপর নাম ভাদ্র পূর্ণিমা। তবে বিশ্বে এটি ‘মধু পূর্ণিমা’ নামে পরিচিত।
তথাগত বুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি পূর্ণিমাতেই সংঘটিত হয়েছিল। অষ্টমী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধরা উপোসথ পালন করেন। নির্দিষ্ট বিহারে ভিক্ষুসংঘরা আষাঢ়ে পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত অবস্থান করার নিয়ম রয়েছে। এ তিন মাস বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকারাও উপোসথ শীল গ্রহণ করেন। ধর্মীয় নৈতিক জীবন গঠনে উপোসথ শীল পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে ভাদ্র পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। কারণ, ভাদ্র পূর্ণিমাতেই এর তাৎপর্য বেশি। বুদ্ধ মোট ৪৫ বর্ষাব্রত পালন করেন। তিনি এই ৪৫ বর্ষাব্রতের এক বর্ষাবাস যাপন করেন পারলেয়্য গভীর অরণ্যে। এ সময়ে বুদ্ধের মৈত্রী প্রভাবে অনেক বন্যপ্রাণী পোষ মানে। অরণ্যের প্রাণীদের মধ্যে পারলেয়্য নামক এক বড় হাতি ছিল। এই হাতিটিই বুদ্ধের সেবা-যত্নে লেগে গেল। প্রতিদিন বুদ্ধকে দান করত বনের সুমিষ্ট ভালো ভালো ফল। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে হাতিটি বুদ্ধের সেবা ও পূজা করত ।
পারুলীয়া বনে বুদ্ধকে কিভাবে প্রতিদিন সেবকরা দান দিত তা একই বনের এক বানর ও একটি হাতি এই পূজা, সেবা ও দানের দৃশ্য গাছের মগডাল থেকে বসে বসে দেখত। বানরের মনেও বুদ্ধকে কিছু দান করার বাসনা জাগ্রত হলো। কিন্তু বানর দেখতে পেল, হাতি বনের ভালো ভালো সুমিষ্ট সব ফল বুদ্ধকে দান করছে। বানর বুদ্ধকে কী দান দিতে পারে, এ নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। বানর বনে বনে বিচরণ শুরু করে দিল হাতির চেয়েও উৎকৃষ্ট দানীয় ফলাদি দেওয়ার জন্য। না, কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না বানর। ক্লান্ত হয়ে গাছের ডালে বসে ঝিমাচ্ছিল। হঠাৎ বানর গাছে একটা মৌচাক দেখতে পেল। মৌমাছি মৌচাকটি ছেড়ে চলে গেছে। ওই মৌচাকে তখনো কিছু মধু সঞ্চিত ছিল। বানর অতি যতœসহকারে মৌচাকটি নিয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে তথাগতের হাতে তুলে দিল। বানরের দেওয়া মৌচাকের মধু বুদ্ধ তৃপ্তিসহকারে পান করলেন। বানর বুদ্ধকে মধু পান করতে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গাছে গাছে লাফাতে গিয়ে গাছের একটি ডাল ভেঙে বানর মাটিতে পড়ে গিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হলো। একাগ্র চিত্তে মধু দান করার ফলে বানর মৃত্যুর পর স্বর্গে দেবপুত্র হিসেবে জন্ম নিল।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে আজকের এই দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মধু পূর্ণিমার শুভ এই দিনটি নানা উৎসব, আনন্দ ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেন। নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এই দিন বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে মধু দান করার জন্য উৎসবে মেতে ওঠেন।
এই মধুপুর্ণিমার দিনে ধর্মপ্রান উপাসক উপাসিকা , দায়ক দায়িকা সহ সকল বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারিরা সারাদিন বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে বুদ্ধ পুজা সীবলী পুজা, পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহন, দেশ তথা সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের জন্য সমবেত প্রার্থনা করবেন ।
এউপলক্ষে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের বৌদ্ধ বিহার ও প্যাগোডাগুলোতে বিশেষ অনুষ্টানের আয়োজন করেছেন । ঢাকা ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার , চট্টগ্রামের নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার,কাতালগঞ্জ নবপন্ডিত বিহার,চট্টগ্রাম সার্বজননীন
বৌদ্ধ বিহার,হোয়ারাপাড়া সুদর্শন বিহার, রাউজান জ্ঞানানন্দ বিহার , আবুরখীল নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহার , সূর্য বৈদ্য মন্দির , পুর্ব আবুরখীল তালুকদার পাড়া শান্তিময় বিহার , কেন্দ্রীয় বিহার , মনোকামনা বুদ্ধ জাদি বিহার সহ সকল বৌদ্ধ বিহারে নানা আয়োজনে এই মধু পুর্নিমা উদযাপন করা হবে ।