রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
শুক্রবার (১ মার্চ) ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এই অগ্নিকান্ডের ঘটনার নেপথ্যের কারণ, ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণসহ হতাহত বেশি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করবে এই কমিটি।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কমিটির সদস্য সচিব ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন, সংশ্লিষ্ট জোনের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি), সিনিয়র স্টেশন অফিসার এবং ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টরকে। কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় বেইলি রোডের ওই ভবনে আগুন লাগে। সাততলা ওই ভবনে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট, খানাস, ফুকো, অ্যাম্ব্রোশিয়াসহ একাধিক রেস্টুরেন্ট ছিল ও দোতলায় কাপড়ের দোকান ‘ক্লজেট ক্লাউড’ ও ‘ইলিয়েন’ ছিল। এসব দোকানপাট অনেকাংশেই ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৫ জন। বইলি রোডে অগ্নিকান্ডে এত মৃত্যুর কারণ কী? আগুনের সূত্রপাত হয় নিচতলায়, একটিমাত্র সিঁড়ি দিয়ে নামতে পারেনি মানুষ; ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন উপরের ফ্লোরগুলোতে তারা কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার শিকার হন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ধারণা। সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাতে ভিড় বেশিই ছিল বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে, কাচ্চি ভাইসহ অন্য দোকানগুলো ছিল জমজমাট; কিন্তু ভয়াবহ এক আগুনে ভবনটি রূপ নেয় মৃত্যুপুরীতে।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগার পর ধীরে ধীরে আসতে থাকে মৃত্যুর খবর। হাসপাতাল থেকে ছুটতে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্স, সারি সারি মরদেহ নিয়ে যায় মর্গে। ২০১১ সালে একটি বেইজমেন্টসহ আট তলা আবাসিক কাম বাণিজ্যক ভবন হিসেবে গ্রিন কোজি কটেজের নকশা অনুমোদন দেয় রাজউক। এত মানুষের মৃত্যুর পেছনে আগুনে পোড়া ছাড়াও বিষাক্ত কালো ধোঁয়াকেও কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। আগুন লাগার পর উত্তাপ আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় গ্রিন কোজি কটেজের ওপরের তলাগুলো। শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট পরির্দ্শন করে ৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। এই চিকিৎসক বলেন, “যারা মারা গেছেন তারা কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ, একটা বদ্ধ ঘরে যখন বের হতে পারে না, তখন ধোঁয়াটা শ্বাসনালীতে চলে যায়। প্রত্যেকেরই তা হয়েছে। র্যাবের ডিজি খুরশীদ আলম ঢাকা মেডিকেলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের দেখার পর সাংবাদিকদের বলেন, আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল ভবনের নিচের একটি ছোট দোকানে। সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে তারা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণেও এনেছিলেন। তবে পরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। “অধিকাংশ মানুষই ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরোধে মারা গেছেন। ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি ছিল। দুইটি লিফট ছিল। আগুন লাগার পর মানুষ নামতে পারেনি।