পবিত্র ১১ রমজান উত্তর জেলা ও ফটিকছড়ির নিবেদিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত ৯০ দশকের বিএনপির একনিষ্ঠ, নির্লোভ দলের নিবেদিত প্রাণ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের আজ ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১০ সালের ১১ রমজান এই দিনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সম্মানিত সদস্য, ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক সম্মানিত সদস্য ও বক্তপুর ইউনিয়ন বিএনপির দীর্ঘদিনের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী মরহুম মুহাম্মদ আব্দুল মান্নানের মৃত্যুবার্ষিকী।
৯০ দশকে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ ফটিকছড়িতে বিএনপির রাজনীতি করা একপ্রকার দুঃসাধ্য ছিল। সেই সময়ে দক্ষিণ ফটিকছড়িতে আওয়ামী রাজনীতির একক আধিপত্য থাকলেও তিনি নির্ভয়ে ও নিশ্চিন্তে দক্ষিণ অঞ্চলে রাজনীতির প্রচার-প্রসার করেছেন। অনেক মৃত্যু হুমকি, মামলা ও ভয়ভীতি তাঁকে তাঁর নীতি থেকে টলাতে পারেনি। তিনি শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক হলেও এলাকার সকলের সঙ্গে সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন বলে এলাকাবাসী জানায়। মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা লোকমুখে শোনা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী নেতা বলেন, “মান্নান ভাই তাঁর দল ক্ষমতায় থাকাকালীন আমাদের খুব কাছ থেকে আগলে রাখতেন। কখনও আমাদের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাননি, প্রশাসন থেকেও আমাদের নিরাপদে রাখতেন। তখনকার সময়ে আমাদের দলের লোকেরা তাঁকে অনেক নির্যাতন করলেও তিনি তা মনে রাখেননি। ক্ষমার রাজনীতি করে তিনি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা বর্তমানে খুবই বিরল।”
ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার বলেন, “ফটিকছড়ির দক্ষিণ অঞ্চলে মান্নান ভাই ছিলেন শহীদ জিয়ার একজন আদর্শের সৈনিক। তিনি স্রোতের বিপরীতে রাজনীতি করে গেছেন। বিএনপির জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি মরহুম শহীদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আমার নির্বাচনে জীবন বাজি রেখে দলীয় প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ফটিকছড়ির বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে বলছি, তাঁর মতো একজন আদর্শের সৈনিক বর্তমানে খুবই দরকার। আল্লাহ মান্নান ভাইকে বেহেশত নসিব করুন—এই দোয়া করি।”
উত্তর চট্টলার বিএনপি নেতা সরওয়ার আলমগীর বলেন, “মরহুম মান্নান ভাই আমার খুব কাছের একজন মানুষ ছিলেন। দলীয় যে কোনো দুর্যোগের সময় তিনি সবার আগে থাকতেন। যে সময় ফটিকছড়ির দক্ষিণ অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতি করা কঠিন ছিল, সেই সময় তিনি রাজপথে লড়ে গেছেন। দলের এই মুহূর্তে মান্নান ভাইদের অভাব পূরণ করার মতো কেউ নেই। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মকাম দান করুন।”
বিভিন্ন স্তরের দলের নেতারা বলেন, “তিনি ছিলেন দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এই মানুষটির অভাব কখনও পূরণ হওয়ার নয়। প্রতিকূল পরিবেশে নিজের জীবন বাজি রেখেছেন, কিন্তু অন্যায়-অবিচারের কাছে কখনো আপস করেননি।”
বখতপুর ছাত্রদলের সভাপতি ওমর তানভির বলেন, “তিনি ইস্পাত-কঠিন মনোবলের একজন মানুষ। যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেতেন। প্রবল শক্তিশালী প্রতিপক্ষের অন্যায় আবদার ও ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। কেন্দ্র পাহারা দিতে গিয়ে বারবার শারীরিক নির্যাতনের মুখোমুখিও হয়েছেন। তবুও কখনো মাথা নত করেননি। আমরা উনার ত্যাগের কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি, তাই কখনো উনার মৃত্যুর দিনটা ভুলতে পারি না। আজকের এই দিনে মহান আল্লাহর দরবারে মরহুম আব্দুল মান্নানের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করছি।”
বর্তমানে তাঁর সকল সন্তান প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এক ছেলে প্রবাসে প্রতিষ্ঠিত। আরেক ছেলে আগ্রাবাদে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত আছেন। তাঁর ছোট মেয়ে ধর্মপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনে মহিলা মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।