চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ওসি আরিফুর রহমান আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। এই অভিযোগে গত ২৩ এপ্রিল সিএমপির কমিশনার ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সরকার পতনের আন্দোলনের পর থেকে বায়েজিদ থানায় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ও গ্রেফতার চলছে। ওসি আরিফ যেন আওয়ামী লীগ ক্যাডারের ভূমিকা পালন করছেন।
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ওমা. মেজবাহ উদ্দিন জানান, শুধুমাত্র নামের মিল থাকার কারণে তাকে ছাত্রলীগ সদস্য মইনুদ্দিন আহমদ মুমিন ওরফে বাবুর করা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। অথচ কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং গ্রেপ্তারের সময় ওসি আরিফ টাকা দাবি করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক পরিবার কল্যাণ সম্পাদক জাকির হোসেন মিশুর বিরুদ্ধেও দায়ের হওয়া মামলা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর আমিন জুট মিলস এলাকা থেকে ট্রাকের মালামাল সরানোর ঘটনায় মামলা করা হয় (মামলা নম্বর ৩৩/১০-২০২৪)। মিশু লিখিতভাবে জানান, ঘটনার সময় তিনি চকবাজারের বালি আকার্ডে অবস্থিত শেঠ প্রপার্টিজ অফিসে ছিলেন এবং এর সিসিটিভি ফুটেজও দাখিল করেছেন।
এই মামলায় বাদী আদালতে ‘অনাপত্তিপত্র’ জমা দিয়ে জানান, মিশুর জামিনে তার কোনো আপত্তি নেই। তখন প্রশ্ন উঠেছে, যখন বাদীই অভিযোগে আস্থা রাখছেন না, তখন পুলিশ কীভাবে এমন মামলা গ্রহণ করল?
একই মামলায় ছাত্রদল নেতা তানভীর ইসলাম (তাসিন) ও জিয়াউর রহমান কলেজ শাখার এক কর্মীকেও আসামি করা হয়। তারা লিখিতভাবে জানান, অভিযোগে উল্লিখিত সময় তারা দোকানে নাস্তা করছিলেন। দোকানের সিসিটিভি ফুটেজেও তা প্রমাণিত হয়। তাদের ক্ষেত্রেও বাদী জামিনে ‘অনাপত্তিপত্র’ দিয়েছেন।
এছাড়া, সাবেক নগর ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ওসি আরিফুর রহমানের কথোপকথন সংবলিত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে রাজনৈতিক বিষোদগার ও প্রতিহিংসার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও অডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি, তবুও বিষয়টি জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার আচরণ কতটা পেশাদার হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আরিফুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. রইছ উদ্দিন বলেন, “কোনো থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”