বাঁশখালীর ৫ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালখালীর পৌরসভার মেয়র জহুরুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। উক্ত মামলায় বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন চৌধুরী খোকনকে প্রধান আসামি করে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। আদালত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
১১ মার্চ চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবির শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
উক্ত মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে বাঁশখালী যুবলীগের নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জসীম উদ্দিন চৌধুরী খোকন, চট্টগ্রাম আইন কলেজের সাবেক ভিপি ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রায়হানুল হক চৌধুরী, মো. জহির উদ্দিন বাবর, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী ও সনেট দাশ। এামলার বিষয়ে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। অভিযোগ সূত্র মতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুরের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৯০ দিনের জন্য বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
এতে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য অধ্যাপক নূরুল মোস্তফা সিকদার (সংগ্রাম) কে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্যরা হলেন যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহাদাত রশিদ চৌধুরী, মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন চৌধুরী (খোকন), কাউন্সিলর আরিফ মাঈনুদ্দিন, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন চৌধুরী, সদস্য-আতাউর রহমান কাদের চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন, খোরশেদ আলম পাশা, আবদুল ওদুদ লেদু, জাহেদুল আলম মিজান, জামাল উদ্দীন, মনসুর আলম, আবদুল জব্বার, মুজিবুল আলম মুজিব, মিশুক কান্তি দে, বেলাল সিকদার, মাহমুদুল ইসলাম বদি, ওসমান গণি, মুহাম্মদ এরশাদ, বখতেয়ার হোছাইন, আইনুল ইসলাম ইফতেখার, গিয়াস উদ্দিন, আজমিরুল ইসলাম চৌধুরী, সাদ্দাম হোসাইন, মহসিন সিরাজ, মোহাম্মদ রায়হানুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান বাবুল, জহির উদ্দিন বাবর, মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, সনেট দাশ, মো. নোমান।
কিন্তু কমিটি ঘোষণার নয় দিনের মাথায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নানান অভিযোগ তুলে যুগ্ম আহ্বায়ক খোকনসহ ৫ জন পদত্যাগ করেন। অতীত রাজনীতির মিথ্যা পদবি ব্যবহার ও অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেন পদত্যাগ করা যুবলীগ নেতারা। এছাড়া হত্যা মামলার আসামি, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু, রাজাকার পরিবারের সদস্যদের এ কমিটির পদে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তারা। এদিকে বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি সংযুক্ত করে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করা নেতারা। সেখানে যুবলীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী বক্তব্য দেওয়া হয়, অর্থ লেনদেনের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। সেই অভিযোগগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যমের সহায়তায় ছাপিয়ে ৫ অভিযুক্ত নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট করেন। এর ফলে এলাকায় যুবলীগ কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় ও এলাকার শান্তিশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটে।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের বিরুদ্ধে এমন মানহানিকর, মিথ্যা, বানোয়াট, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালখালীর পৌর মেয়র জহুরুল ইসলাম জহুর এই মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি দায়ের বাদির আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট রফিকুল আলম। আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট শুভাশিস শর্মা, অ্যাডভোকেট সেলিম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন সিবলু।
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের নব গঠিত কমিটির আহ্বায়ক নুরুল মোস্তফা সিকদার সংগ্রামের সাথে একাধিকার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে এসএমএস পাঠানোর পরও কল রিসিভ করেনি। চট্টগ্রাম আইন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রায়হানুল হক চৌধুরী বলেন, যে কমিটি গঠন করা হয়েছে কমিটিতে তৃনমূলের মতামতের প্রতিফলন হয়নি, কমিটিকে তৃণমূল নেতা কর্মীরা মেনে নিতে পারেনি, কমিটি হওয়ার পর যেখানে আনন্দ উৎসব হওয়ার কথা সেখানে ক্ষোভ বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। মামলার প্রসঙ্গে বলেন, এটা কোন বিষয় না রাজনৈতিক মামলা এগুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধান হবে এটা নিয়ে কোন চিন্তা করার কারণ নেই।
জহুরুল ইসলাম জহুর বলেন, বাঁশখালী উপজেলার নবগঠিত যুবলীগ কমিটি থেকে ৫ জন পদত্যাগ করার আগে সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী কিংবা আমার সঙ্গে আলাপ করেননি। যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তারা সবার বায়োডাটা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং সামাজিক অবস্থান রাজনৈতিক অবস্থান, বিগত দিনের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করে কমিটিতে রাখা হয়েছে। যারা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছে তারা দলের সাথে বেঈমানী করার মত। তাদের কোন বক্তব্য অভিযোগ থাকলে দলীয় ফোরামে জানাতে পারতেন, তারা তা না করে পুরো দেশের যুবলীগকে বির্তকিত করার ষড়যন্ত্র করেছে, দলের বিরুদ্ধে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশনার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। মানহানিকর ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে তারা।