শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
spot_img
শিরোনাম

বাঁশখালীর সরলে সংঘর্ষের ঘটনার ভাইরাল ভিডিও থেকে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

মুহাম্মদ দিদার হোসাইন, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরলে লবণ মাঠ নিয়ে পূর্ব বিরোধের জের ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সংগঠিত দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্রধারীরা কারা? তা নিয়ে ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে এবার বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে বাঁশখালী উপকূলের সরল ইউনিয়নের উত্তর সরল নতুন বাজার এলাকায় সরকারি জায়গা দখল ও আধিপত্য বিস্তারে পূর্ব বিরোধের জেরে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘটিত ওই ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় অবৈধ অস্ত্র হাতে নিয়ে কিছু লোক এলোপাতাড়ি গুলি করার দৃশ্য। কিন্তু এই বন্দুকধারীরা কারা? তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার দেলোয়ার এবং মনসুর আলম গ্রুপ বনাম আমান উল্লাহ ও কবির গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
লবণ মাঠ থেকে ফেরার পথে দেলোয়ারকে আটকে রেখে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করায় এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে বলে দাবি করেন দেলোয়ার ও মনসুর আলম গ্রুপের লোকজন। অপরদিকে ডা. গিয়াস উদ্দিন ও তার পক্ষের লোকজনের দাবি, দেলোয়ার এবং মনসুর গ্রুপের লোকজন অবৈধ অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সরলের নতুন বাজার এলাকায় ডা: গিয়াস উদ্দিনের ঔষধের দোকানে হামলা, মালামাল লুট এবং গিয়াস উদ্দিনকে মারধর করায় দুপক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ দুপক্ষের অন্তত ৩০ জন লোক আহত হয়।

ঘটনার পর থেকে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ঘায়েল করতে বিভিন্ন মিডিয়ার সামনে যার যার মতো করে বক্তব্য দিচ্ছে দেলোয়ার ও মনসুর গ্রুপের লোকজন। তবে সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে এবার বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেলোয়ারের ছেলে মোবারক হোসেন (নয়ন) নামে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, প্রতিপক্ষের লোকজন লবণ মাঠ থেকে আসার পথে তার বাবাকে মারধর করছে, তার বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে ফেলেছে এবং প্রতিপক্ষের লোকজন তাদেরকে গুলি করছে, সে নিজেও গুলি খেয়েছে বলে ওই ভিডিওতে বলতে শোনা যায়। তবে ওই ঘটনার ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, দেলোয়ারের ছেলে মোবারক হোসেন (নয়নের) সাথে থাকা কালো গেঞ্জি ও মাথা-মুখে কালো মুখোশ পরিহিত এক যুবক, একই সাথে মাথায় হেলমেট ও কালো শার্ট পরিহিত এক যুবক, সাদা শার্ট ও লুঙ্গি পরিহিত এক লোক, লম্বা হাতের সাদা শার্ট ও লুঙ্গি পরিহিত আরও এক লোকসহ অন্তত ৫-৬ জন বন্দুকধারী লোককে বন্দুক হাতে নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে দেখা গেছে। ওই ভিডিওতে আরও অনেকের হাতে ধারালো আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা যায়। এইসব অস্ত্রধারীদেরকে আর্তচিৎকার করা সেই (নয়ন) এর পাশে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিপক্ষের লোকজন যদি তাদেরকে গুলি করে তাহলে এই (নয়ন) এর সাথে থাকা অস্ত্রধারী লোকগুলো কারা? তা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের যেনো শেষ নেই।
দৈনিক শাহ্ আমানত পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে বেরিয়ে আসলো চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এই ভিডিও পর্যালোচনায় ওই এলাকার শাহাজাহান, আলী আহমদ, আবু তাহের, রুবেলসহ কয়েকজন বন্দুকধারীর পরিচয়ও শনাক্ত করা হয় এবং তারা মোবারক হোসেন (নয়ন) এর বাবা দেলোয়ার হোসেন এবং মনসুর আলম গ্রুপের লোক বলেও জানা গেছে। এই সংক্রান্তে ভাইরাল হওয়া অন্তত ৪টি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওগুলো দেখলে মনে হয় যেনো সশস্ত্র বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি, বাঁশখালীর সরলে সরকারি খাস জায়গা এবং লবণ মাঠ দখল-বেদখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি নতুন নয় বরং যুগ যুগ ধরে লেগেই আছে এমন ঘটনা। কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তা কোনো হিসেব নেই। যেকোনো তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করেও বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে যায় এই সন্ত্রাসীরা। অনেক নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করতে দ্বিধা করে না তারা, তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না বলেও জানান স্থানীয়রা। সংঘটিত গোলাগুলির ভাইরাল হওয়া ভিডিও পর্যালোচনা করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করতে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, অপরাধীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে পুলিশের জোরালো অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সরলের দুগ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিও ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

- Advertisement -spot_img
spot_img

সর্বশেষ