চট্টগ্রাম-১৫ সংসদীয় আসনের বর্তমান এমপি এম এ মোতালেব এমপি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন বিষয় এবং দলীয় বিষয় নিয়ে একে অপরকে দায়ী করে বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার হামলা সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। যা নিয়ে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সাতাকানিয়ায় আওয়ামী রাজনীতি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে উত্তাপ্ত অবস্থা রিরাজ করেছে। যে কোন সময় আরও ধরণের সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানায়।
বর্তমান এমপি এম এ মোতালেবের অভিযোগ সাবেক এমপি প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী কাদা ছোড়াছোড়ি করে নিজের অতীত এবং বিগত দিনে অপকর্ম ঢাকতে চান বলে অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর দাবি সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় যারা নৌকার পক্ষে যে সব নেতা কর্মী কাজ করেছে তারা আজ ঘরছাড়া হতে হয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল জুলুন নির্যাতন করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ নিদের্শনা এবং দলীয় নির্দেশনা যারা মানে না ষড়যন্ত্রকারী ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বর্তমান এমপি স্বতন্ত্র পরিচয় দিলেও মূলত জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মরিয়া তিনি আওয়ামী লীগকে ধ্বংশ করতে একের পর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করেন।
গতকাল রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাতকানিয়া- লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাতকানিয়া লোহাগাড়ার বর্তমান এমপি এম এ মোতালেব অভিযোগ করেন বলেন, সাবেক এমপি নদভীর ধারাবাহিক মিথ্যাচার, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা ও সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদ ও তার পরিবারের অর্জিত অবৈধ সম্পদের উৎস ও বিদেশে অবৈধ অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে দুদকের তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান। এমপি এম এ মোতালেব বলেন, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখাত সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভী গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কাল্পনিক, অবান্তর ও প্রতিহিংসামূলক মিথ্যাচার করে বক্তব্য রেখেছেন। তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই বক্তব্য চট্টগ্রাম-১৫ আসনের জনমনে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকেই একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। এমপি মোতালেব বলেন, নদভীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্থ ও ভুক্তভোগীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত, নির্যাতিতদের আহাজারিতে সেদিন দেওদিঘীর বাতাস ছিল ভারী। নদভীর দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় সাক্ষী তো ওই মানববন্ধনকারীরাই, যারা তার হাতে দীর্ঘ দশ বছর নির্যাতিত, তার ভাইপোর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিল। নদভীর মাধ্যমে নির্যাতিন সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় হাজার হাজার মানুষ রয়েছে তারা স্বেচ্ছায় রাস্তায় নেমে নদভীর বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করে আসছে।
তিনি আরও বলেন,জীবনে একদিনও আওয়ামী লীগ না করে দুইবার আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন নদভী সাহেব। তারপর স্ত্রী, ভাইপো, শ্যালক, ভাগিনা, এপিএসরা সিন্ডিকেট করে লুটপাটের স্বগরাজ্য বানিয়েছিলেন সাতকানিয়া লোহাগাড়াকে। এখন চোরের মায়ের বড় গলা হয়েছে। তিনি নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা ও নিষ্পাপ প্রমাণ করতে চান।
সংবাদ সম্মেলনে নদভী ৬ খুনের মিথ্যা গল্প সাঁজিয়েছে। এই গল্প অগ্রহণযোগ্য, নিন্দনীয় ও তথ্য-প্রমাণহীন। সাতকানিয়া লোহাগাড়ার দুই থানার ওসি এই বক্তব্য প্রত্যাখান করে সংবাদপত্রে বলেছেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা নেই, ৬ মার্ডারের বিষয়টা কাল্পনিক। সাবেক এমপির নিজ এলাকা মাদার্শায় মাদক নিয়ে বিরোধে একজন নিহত হয়েছেন, অভিযুক্ত সকল আসামি গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন, আর কোনো মার্ডার গত আড়াই মাসে হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যাপক ডাক্তার আ ম ম মিনহাজুর রহমান, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন হিরু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়–য়া, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ সাইফুদ্দীন সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন ও জসিম উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহজাহান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম শিকদার, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিয়া কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা আওয়মী লীগের সদস্য মামুনুর রশিদ, সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আঞ্জুমান আরা বেগম, সাতকানিয়া পৌর মেয়র মোহাম্মদ জুবায়ের, সাতকানিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফুর লালু, সাধারণ সম্পাদক একেএম আসাদ, চইউপি চেয়্রম্যান জয়নাল আবেদীন জুনু, ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন, চেয়ারম্যান হারুন রশিদ, চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব, চেয়ারম্যান আবু সালেহ, চেয়ারম্যান রমজান আলী, চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত, চেয়ারম্যান ওসমান আলী, চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন, চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক চৌধুরী, চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন টিপুসহ বর্তমান সাবেক একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান এবং দলীয় নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর অভিযোগ সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রতীকের বিরুদ্ধে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবস্থান নেয়া মানুষগুলোর এক জায়গায় এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এলাকার মানুষ তাদের খুব ভালো করে চিনে এবং তাদের চরিত্র সর্ম্পকে জানেন। আমার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের সদস্য আমাকে জড়াতে গিয়ে আমার পরিবার এবং আত্বীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামলী লীগের নির্দেশনা মানে না চক্রটি।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে ঈগল প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত এমপির প্রত্যক্ষ মদদে তার উগ্র সমর্থক কর্তৃক সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নৌকা প্রতিকের পক্ষে কাজ করার অপরাধে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর নগ্ন হামলা, বাড়ি-ঘর ভাংচুর, মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে হচ্ছে। নির্বাচনের পর এলাকায় একাধিক খুন-খারাবি, চাঁদাবাজি, ধারাবাহিক চুরি-ডাকাতির ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। কুচক্রী মহলের কাজ হলো অন্যের জমি দখল করা, টিআর, কাবিখা নিয়ে সেগুলোর অর্থ লুটে খাওয়া। তারা আমি যখন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম এ কুচক্রী মহলের গডফাদার আমার কাছে এসে দলীয় নেতাকর্মীদের কথা বলে বলে বিভিন্ন প্রকল্প ভাগিয়ে নিতে চেয়েছিলো। পরে যখন জানতে পারি, এসব সে নিজে খেয়ে ফেলে। কেরানীহাট এলাকায় খাতুনগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুসলিম উদ্দিন ও ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের জমি দখলের অপচেষ্টা চালায় সে। দেওদিঘী এলাকাও বিভিন্নজনের জমি দখলের অপচেষ্টা চালায়। তার এইসব অপকর্ম এলাকাবাসী তথ্য প্রমাণসহ আমার সামনে হাজির করলে আমি তাকে আর কাছে ঘেঁষতে দিইনি। এরপর সে আমার বিরুদ্ধে মাঠে নামে। পরবর্তীতে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁধে ভর করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকাকে ডুবানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তার লালিত সন্ত্রাসী বাহিনীসহ আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে এবং আমার ও আমার স্ত্রীসহ পরিবারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক জঘন্য মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা চালাতে থাকে।
সেমাই, চিনি দেওয়ার কথা বলে ৩০/৪০ জন লোক জোগাড় করে লাইনে দাঁড় করিয়ে আমি, আমার সহধর্মীণিসহ আমার পরিবারের বিরুদ্ধে আপত্তিকর ও মানহানিকর ব্ক্তব্য সম্বলিত প্লেকার্ড ও ব্যানার-ফেষ্টুন নিয়ে কথিত মানববন্ধন বলে চালিয়ে দেন। যারা উপস্থিত ছিল তাদের সাথেও প্রতারণা করা হয়েছে। নিজ দায়িত্বে মিডিয়ায় পাঠিয়ে নিউজ কভার করতেও বলা হয়।
আমি দুইবারের জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি। আমার প্রতিষ্ঠিত এনজিও সংস্থা আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিগত ২৬ বছর ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াসহ দেশব্যাপী হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এক হাজারের অধিক মসজিদ, ওজুখানা, মাদ্রাসা কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছি, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ২০ হাজার শেল্টারসহ ৩০ হাজারের মত ঘরবাড়ি নির্মাণ ও সংস্কার করেছি আরববিশ্বসহ পৃথিবীর নানা দেশের সহায়তায়। বিভিন্ন দূর্যোগে এ পর্যন্ত ৫ লাখ মানুষের হাতে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমি খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। কোরবানীর উপলক্ষে হাজার হাজার গরু-ছাগল বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিয়েছি। ২০২২ সালে সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর ৬৫০০ পরিবারকে ঘর সংস্কারের কাজ করে দিয়েছি। আর তারা কি-না বলে বেড়ায় আমি আমার এলাকার মানুষ থেকে টাকা নিয়েছি। নদভীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এম এ ইদ্রিস, লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম গনি সম্রাট, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোসলে উদ্দিন জাকেরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ