চট্টগ্রাম নগরীতে রাতের আঁধারে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রতিরাতে কয়েক কোটি টাকার কাঠ পাচার হয়ে আসছে। বন বিভাগের লোকজন দাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকায় কাঠের ট্রাক প্রতি প্রকাশ্যে টাকা নিতে দেখা যায়। জানা গেছে, চাঁন্দগাও-বলিহাট রুটে নিরবে চলছে চোরাই কাঠ পাচারের মহা উৎসব। প্রতিদিন এই রোডে প্রায় ১৫ থেকে ২০ ট্রাক বিভিন্ন প্রজাতির চোরাই কাঠ পাচার হচ্ছে তারমধ্যে সেগুন কাঠ অন্যতম। এই দিকে কাঠ পাচার করার জন্য পাচারকারীরা ভিন্ন রকমের কৌশল অবলম্বন করছে। যেমন, যেসব ট্রাকে এই চোরাই কাঠ পাচার হচ্ছে সেইসব ট্রাকে থাকে না কোন গাড়ির কাগজপত্র এবং গাড়ির নাম্বার প্লেট। যার ফলে ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে চোরাই কাঠভর্তি এই ট্রাকগুলোর প্রকৃত পাচারকারীরা। এমন একটি ঘটনায় চোরাই কাঠ বোঝাইকৃত ট্রাকের বিষয়ে চান্দগাঁও থানাকে অবহিত করলে ট্রাকের নাম্বার প্লেট না থাকায় ট্রাকটিকে আটক করতে পারেনি থানা পুলিশ।
সূত্রে জানা যায়, দৈনিক ১০ থেকে ২০ ট্রাক গাছ পাচার হচ্ছে চান্দগাঁও রোড হয়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। বন বিভাগ ও পুলিশকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে গাছ পাচার করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ধ্যার পরে কাঠ পাচার হলেও রাত দশটার পর এর সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে যায়। রাত ১২ টার পরে ঘন্টায় দুই থেকে তিনটা গাড়ি প্রবেশ করছে নগরীর চাঁদগাঁও হয়ে বলিরহাট এলাকায়। পাচারকারী এবং লাইনম্যানের যোগসাজশে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এমন অভিনব পন্থায় চোরাই কাঠ পাচারের তথ্য অনুসন্ধানে উঠে আসে।
হিলটেক্স থেকে চোরাই কাঠ চট্টগ্রাম নগরীতে ঢোকার অন্যতম রুট হচ্ছে রাউজান, মদুনাঘাট হয়ে কাপ্তাই রাস্তার মাথা, মোহরা এবং বাহির সিগনাল বেসিক এলাকার ভিতর দিয়ে ঢুকে সিএন্ডবি মোড় হয়ে সোজা বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল হয়ে খাজা রোড দিয়ে বলিরহাটে গিয়ে চোরাই কাঠগুলো খালাস হয়। চান্দগাঁও এলাকার গাছ পাচার সিন্ডিকেটের ক্যাশিয়ারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হারুন প্রকাশ ভাঙ্গা হারুন। প্রশাসন কিংবা বন বিভাগ কেউ গাছ পাচারের ট্রাক আটক করলে লাইনম্যান ও ক্যাশিয়ার হারুন এর নেতৃত্বে চলে রফা দফা। এই লাইনম্যান কে ম্যানেজ করলেই নাকি ট্রাক ভর্তি চোরাই কাঠ নির্দ্বিধায় শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যায়।
গোপনে কাঠ পাচার হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাংবাদিকের একটি টিম উপস্থিত হয় কাপ্তাই নজুমিয়া হাট এলাকায়। নজুমিয়া হাট এলাকার বিপরীত থেকে আসা একটি বোঝাইকৃত চোরাই কাঠের ট্রাককে সিগন্যাল দিলে সে বেপরোয়া-গতিতে চান্দগাঁও মোহরা, বাহির সিগনাল এবং বিসিক শিল্প এলাকা হয়ে পালিয়ে যায়। অনুসন্ধানী টিম মোটরসাইকেল যোগে ওই ট্রাকটিকে অনুসরণ করলে এক সময় গাড়িটি মোহরা চাঁন্দগাঁও বিসিক শিল্প এলাকার একটি নির্জন স্থানে গাড়ি দাঁড় করায়। কাঠ বোঝাই ট্রাক ড্রাইভারের কাছে কাঠ গুলো কোথায় থেকে আসতেছে এবং গাছের ডকুমেন্ট আছে কিনা জানতে চাইলে সে মুখ খুলতে নারাজ। গাড়ির ডকুমেন্টস এবং নাম্বার প্লেট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো সৎ উত্তর দিতে পারে নি। পরে এই ড্রাইভার ফোন দেন জেলা ও মেট্রোর ফরেস্টের ক্যাশিয়ার এবং অবৈধ চোরাই কাঠের লাইনম্যান হারুন কে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাশিয়ার হারুন বলেন, এই রুটে যতগুলো গাছ পাচারের গাড়ি চলে সবগুলো আমার নিয়ন্ত্রণে চলে। প্রশাসন, বন বিভাগ কিংবা অন্য কেউ যেই এই গাড়িগুলাকে ধরে গাড়ীর ড্রাইভার আমার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয় এবং আমি তাদের সাথে গোপনে রফা দফা করে দেয়। এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ফরেস্ট রেঞ্জার, রেঞ্জ কর্মকর্তা, সার্ভে রেঞ্জ, চট্টগ্রাম শহর উত্তর বন বিভাগ মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, লাইনম্যান ও ক্যাশিয়ার হারুন নামের কাউকে আমরা চিনি না। কাঠ পাচারের বিষযয়ে আমরা নজরদারি বাড়াচ্ছি এবং খবর পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেব।