বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমির ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহাজাহান চৌধুরী বলেছেন, নবী মুহাম্মদ (স.) যেমন মসজিদের ইমাম যুদ্ধের ময়দানেও সেরকম সেনাপতি। রাসূলুল্লাহ (স.) বদর ও ওহুদের যুদ্ধে সিপাহসালার ছিলেন। আজকে নবী (স.) কে দুভাগে ভাগ করে ফেলেছি। তাঁর যুদ্ধনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি মানতে অনীহা। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশে তৌহিদী জনতারা নবীর জীবন আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে। বাংলাদেশে এমন লোকও আছে নবী (স.) নামাজ পড়েছে তাই নামাজ পড়ি, রোজা রেখেছে তাই রোজা রাখি কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ইসলামকে অস্বীকার করি । অনেকে বলে নামাজ পড়লে হইছেতো সমাজের মধ্যে ইসলাম টানেন কেনো, রাজনীতি, অর্থনীতির ও সমাজনীতির মধ্যে ইসলাম টানেন কেনো। যারা সেক্যুলারিজম ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে তারা এসব বলতে পারেন। তারা হাশরের ময়দানে হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না।
সোমবার ফটিকছড়ির নাজিরহাট ঝংকার মোড়স্থ জারিয়া চত্বরে নাজিরহাট পৌর জামায়াতের উদ্যোগে সীরাতুন্নাবী (স.) মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাজিরহাট পৌরসভা জামায়াতের সভাপতি বায়েজিদ হাসান মুরাদের সভাপতিত্বে মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের আমির আলাউদ্দিন সিকদার, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার, উত্তর জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রধান ওয়াজে ছিলেন চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাওলানা বি এম মফিজুর রহমান আযহারী, বিশেষ ওয়ায়েজ ছিলেন মজলিসুল ওলামা বাংলাদেশের মহাসচিব ও স্টেশন রোড় জামে মসজিদের খর্বিত মাওলানা মামুনুর রশিদ নূরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ইসলামকে যারা মসজিদে মানে বাহিরে মানে না রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় মুজিবাদকে বিশ্বাস করেন তারা হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না। বাংলাদেশকে গত ১৫ বছরে জাহান্নামে পরিণত করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৭২ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল শেখ মুজিব। সেসময় পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিব বলেছিল আমি জামায়াতে ইসলামীকে দাবিয়ে দিয়েছি। অথচ আজকে শেখ মুজিবের ম্যুরালের উপর বাংলার জনগণ স্থান করে দিয়েছে। স্কেভেটর দিয়ে ম্যুলার গুলো ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামির উপর হাজারো নির্যাতন করলেও আমাদের নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। শেখের বেটি দাম্ভিকতার সাথেই বলেছিল আমি শেখের বেটি পালিয়ে যায় না। অথচ ৫ আগস্টে ভারতে পালিয়ে প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মুদির বেটি। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে এই দেশে হাসিনা ১৮ মিনিটও দাঁড়াতে পারেনি। এটাই হলো জামায়াতে ইসলামির কেরামতি। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী হাসিনা সরকারের কাছে মাথানত না করে জামায়াতে ইসলামির নেতারা ফাঁসিতে ঝুলেছে। আওয়ামী লীগ কেয়ামতের ফজরেও বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন। ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আগুন দিয়েছেন। মনে করছেন বাংলার তৌহিদী জনতা এদেশের হিন্দুদের মন্দির জ্বালিয়ে দেবে। এ দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিক অরাজকতা করবে না। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে। আওয়ামী লীগ ছিল ভোট চোর।
ডা. শফিকের নেতৃত্বে আগামীতে বাংলাদেশে সরকার গঠন হবে বলে জানিয়ে সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, অনেকে মনে করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি ৩০ থেকে ৩৫ টা আসন পাবে। যারা মনে করছেন শুনে রাখুন আগামীদিনে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী হবে ডা. শফিকুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে সরকার গঠন হবে। জামায়াতে ইসলামি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামীলীগের পাচার টাকা দেশে এনে দেশের ৯২ লক্ষ যুবককে বিনা সুদে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। হিন্দুস্থান যতই উসকানি দেখ বাংলাদেশ আমরাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করবো। এদেশকে বাঁচাতে এদেশের সার্বভৌমত্বকে বাঁচাতে সকল ভেদাভেদ পরিহার করে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করি। নতুন বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে জামায়াত কর্মীদের কাজ করে যেতে হবে। আসুন বৈষম্যহীন ন্যায়, ইনসাফ ও উন্নয়নশীল সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামির পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে উত্তর জেলা জামায়াতের আমির আলাউদ্দিন সিকদার বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ১৮ বছর নির্যাতন করেও আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এ দেশের মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। বরঞ্চ আওয়ামী লীগ দেশ থেকে পালিয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে কোনো বাঁধায় থমকে দিতে পারবে না।
একমাত্র ইসলাম মানুষের শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে জানিয়ে জেলা জামায়াতের আমির আলাউদ্দিন সিকাদর বলেন, আগামীর আগামীর বাংলাদেশ হবে জামায়াতে ইসলামির বাংলাদেশ। এই জমিনে যদি আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা হয় এই জমিনে যদি কোরআনের রাজ প্রতিষ্ঠা হয় তাহলে মানুষ মুক্তি পাবে মানুষ শান্তি পাবে। সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদী তন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ মানুষের শান্তি আনতে পারেনি। শান্তি আনতে পারে একমাত্র ইসলাম। আল্লাহর কাছে একমাত্র জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। এই ইসলাম সমাজে প্রতিষ্ঠা হয় তাহলে সেই সমাজ হবে শান্তির সমাজ। সেই সমাজ হবে সোনালি সমাজ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সেই ধরনের একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিন বলেন, জুলাই-এর ছাত্র-জনতা বিপ্লবকে ন্যাসাৎ করার বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসররা কখনো আনসার হয়ে, কখনো রিকশা চালক হয়ে আবার কখনো ইসকন লীগ হয়ে ফিরে আসতে চাচ্ছে। দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে শেখ হাসিনা ভারতে বসে বিভিন্ন ভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করছে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। ষড়যন্ত্রের মদদদাতা হচ্ছে ভারত। এদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে বলে ভারত প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সচেতন হতে হবে।
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়কে সোচ্চার হাবার আহ্বান জানিয়ে অধ্যক্ষ নুরুল আমিন আরও বলেন, হিন্দুরা আমাদের ভাই-বোন, দেশে আমাদের যেমন নাগরিক অধিকার রয়েছে। তাদেরও সমান অধিকার রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সে সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হিন্দু ভাইদেরকে সোচ্চার হতে। মনে রাখতে হবে এদেশ আমাদের। এই দেশে কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান হতে দেওয়া যাবে না।
ফটিকছড়ি থানা জামায়াতের শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এর সঞ্চালনায় মাহফিলে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হাটহাজারী থানা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, ফটিকছড়ি থানা জামায়াতের আমির নাজিম উদ্দিন ইমু, ভূজপুর থানা জামায়াতের আমির অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ইসমাইল গনী, হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক শোয়াইব চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আলমগীর মুহাম্মদ ইউনুছ, সাবেক উপজেলা আমির মাস্টার নাজিম উদ্দিন সিকাদার, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নুর মোহাম্মদ আলকাদেরী প্রমুখ।