মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সারাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার মতো চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন কামারপল্লিতে বেড়েছে ব্যপক কর্মব্যস্ততা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের জন্য চলছে দা, ছুরি, বটি ও চাপাতিসহ নানা লৌহজাত হাতিয়ার তৈরির কাজ। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা।
ভাঁতির মাধ্যমে কয়লার আগুনে বাতাস দিয়ে লোহার খণ্ডকে দগদগে লাল করে, সেই গরম লোহাকে হাতুড়ি দিয়ে একের পর এক আঘাত করে রূপান্তর করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিতে। কর্মকারদের হাত-পা-মুখে এখন শুধুই কয়লার কালি। তীব্র গরমে ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর, কিন্তু ঈদের সময় সামনে থাকায় ক্লান্তির কোনো সুযোগ নেই তাদের কাছে।
কোরবানির পশুর চামড়া ছাঁটানো, মাংস কাটা ও হাড় ভাঙার কাজে ব্যবহৃত এসব যন্ত্রপাতির চাহিদা ঈদ উপলক্ষে অত্যন্ত বেড়ে যায়। কামাররা আগাম প্রস্তুতিতে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তৈরি করছেন দা, ছুরি, বটি, চাপাতি, ছোরা ইত্যাদি। কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে কর্মব্যস্ততা।
বাঁশখালী উপজেলার নাপোড়া, চাম্বল বাজার, বাংলা বাজার, মিয়ার বাজার, রামদাস মুন্সির হাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের কামারপল্লিতে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মকারদের নিরবচ্ছিন্ন কাজের দৃশ্য। সারাবছর লৌহজাত সামগ্রীর চাহিদা কিছুটা থাকলেও ঈদুল আজহার সময় ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়, ফলে কামাররা এখন টানা কাজ করে যাচ্ছেন।
রক্তিম লোহায় হাতুড়ির আঘাতে তৈরি হচ্ছে ধারালো অস্ত্র। কেউ দিচ্ছেন শান, কেউ টানছেন ভাঁতি, কেউ সহযোগিতা করছেন অন্যদের। কাপড়, শরীর—সব কয়লার ধুলায় মলিন। আরাম-আয়েশ ভুলে শুধু কাজ আর কাজ। ক্রেতাদের সঙ্গে ছাড়া কোনো আলাপ নেই।
কামাররা এসব সামগ্রী তৈরি শেষে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করছেন। কেউ কেউ নিজের দোকানেও বিক্রি করছেন বিভিন্ন দামে। কোরবানিদাতারাও ইতোমধ্যে পশু জবাইয়ের জন্য সরঞ্জামাদি কিনতে শুরু করেছেন।
সোমবার (২৬ মে) বিকেলে রামদাস মুন্সির হাটের কামারপল্লিতে ব্যস্ত কর্মকার প্রদ্বীপ, নিরঞ্জন, রতন, দীপুদাশ, বিষু, উজ্জ্বল, সৈকত, রূপন ও তপন জানান, বর্তমানে কয়লা ও লোহাসহ কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দা, ছুরি, বটি ও চাপাতি তৈরিতে খরচও বেড়েছে। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় আছেন, বিকল্প কোনো কাজ জানা নেই বলে এই শিল্পের উপরই নির্ভর করতে হয়।
তারা আরও জানান, প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে দা, ছুরি, বটি, ছোরা, কুড়াল, কোদাল, হাতুড়ি ইত্যাদি তৈরি করছেন। কোরবানির ঈদ ছাড়া বছরজুড়ে এসব জিনিসের চাহিদা খুব বেশি না থাকায় অনেককে ব্যাংক, এনজিও বা ব্যক্তিগতভাবে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়। এবছর অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কোরবানির পশু ও সরঞ্জামাদির চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
অন্যদিকে ক্রেতারা জানাচ্ছেন, মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকেই পুরানো দা-বটি শান দিয়ে ব্যবহার করছেন। স্থানীয় নুরুল আলম, মো. আমিন, মো. লেদু, ফরিদ আহমদ বলেন, বাজারে এখন একটি বড় দা আকার ও ওজনভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাপাতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, ছোরা ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, ছোট ছোরা ৮০ থেকে ১২০ টাকা এবং বটি ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শান দেওয়ার জন্যও ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন কর্মকাররা। আকার বড় হলে খরচ আরও বেশি হয় বলে জানান তারা।