বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আনোয়ারার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নৈরাজ্য চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপি নেতা লোহা গফুর, আনোয়ারা উপজেলা যুবদলের সভাপতি হারেছ আহমদ, আবদুল্লাহ্ হারুন চোকন এবং তাদের সহযোগিতায় একক আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া তিনি। সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা বাণিজ্যও চালিয়ে যাচ্ছেন চক্রটি।
তাদের দেয়া মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়ে প্রতিকার পেতে গত ১১ নভেম্বর ২০২৪ চট্টগ্রাম নগরের মোমিন রোডের চট্টগ্রাম একাডেমি হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবিল আহমদ সাব্বির ও সাব্বিরের শ্যালক (ইউনিয়ন যুবদল নেতা) সোহরাব হোসেন সৌরভ। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিকদলের অসংখ্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উত্তর বন্দরের কে-ইপিজেট এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় বিএনপি কর্মী মোহাম্মদ নাছির, নুর আহম্মদ, মোহাম্মদ হাসান, যুবদল নেতা নুরুল আলম, শ্রমিকদল নেতা জয়নাল আবেদীন ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, দক্ষিণ জেলা যুবদল সভাপতি, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান চেয়ারম্যান ও আনোয়ারা উপজেলা যুবদলের সভাপতি হারেছ আহমদের অনুসারীরা চাঁদার জন্য আনোয়ারার বিভিন্ন কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার ও জুট ব্যবসায়ীদের মালবাহী গাড়ি আটকিয়ে চালক হেল্পারদের মারধর করছে।
কথা বলে জানা গেছে তাদের অত্যাচারে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও রীতিমতো অতিষ্ঠ। এছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানি সিইউএফএল- কাফকোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানাধীন সয়া’তে সার ক্যারিংসহ সব কাজ তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান ট্রেডিং-এর নামে দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছে শাহাজাহান, হাসান চেয়ারম্যান ও হারেসের অনুসারীরা।
সূত্র বলছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সুদীর্ঘ ১৬ বছর আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নানের ব্যবসায়ী পার্টনার হয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করার অভিযোগও রয়েছে শাহাজাহানের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেইপিজেটের জুট ব্যবসায়ী হাজি মুহাম্মদ হোসেন বলেন, আমি কয়েকবছর যাবৎ কে-ইপিজেটে বৈধভাবে জুট ব্যবসা করে আসছি। আমার সাথে কারো কখনো ঝামেলা হয়নি।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পতনের বেশ কিছুদিন পর যুবদল পরিচয় দিয়ে একদল যুবক আমার মালবাহী গাড়িতে কয়েক দফা হামলা করে। পরে জানতে পারলাম দুষ্কৃতকারীরা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহান ও আনোয়ারা উপজেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ হারেছের অনুসারী। বিএনপি নেতা হাজি হোসেন বলেন, তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়গুলো বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মহোদয়কে অবহিত করি। তিনি (খসরু চৌধুরী) স্থানীয় প্রশাসনকে ফোন করে বিষয়টি সমাধান করে দেন। এ ব্যাপারে জানতে জেলা যুবদল সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহান ও আনোয়ারা উপজেলা যুবদলের সভাপতি হারেছকে ফোন করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে উত্তেজিত হয়ে দুজনই ফোন কেটে দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আমরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। দখলবাজ, মামলাবাজ, চাঁদাবাজরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করিনি। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহান গংদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এসব বিষয়ে জানতে জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি মোনায়েম মুন্নার মুঠোফোনে দুইদিন ধরে ফোন করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা না বলে তিনি বারবার ফোন কেটে দেন। পরে হোয়াটসঅ্যাপ-মেসেঞ্জারে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাইনি। এ ব্যাপারে যুবদল কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোটো-ছোটো বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কাছে প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে ফোন আসে। অভিযোগের সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শাহাজাহান- হারেছের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।
সত্যতা নিশ্চিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নেয়া হবে।