নাট্যমঞ্চের প্রতি ঝোঁক কমবেশি সবারই থাকে। কেউ কেউ আরাধ্য সে মঞ্চে কালেভদ্রে দু-একবার উঠেই পাঠ চুকিয়ে ফেলেন। জীবন ও জীবিকার তাগিদে শখের অভিনয়ের নেশা ছাড়তে বাধ্য হন অনেকে। কিন্তু ব্যতিক্রম একজন নাট্যশিল্পী বাবলা বড়ুয়া।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দনে জন্ম নেওয়া বাবলা বড়ুয়া পেশায় একজন তুলিকার। কাপড়ের থানে পরম যত্নে শৈল্পিক অক্ষরে ব্যানার তৈরি করাকেই তিনি জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সেই সুবাদেই পরিচয় ঘটে নিবেদিতপ্রাণ নাট্যজন গৌরাঙ্গ দাশের সঙ্গে। গৌরাঙ্গ বাবুর হাত ধরে একদিন মির্জাপুর নাট্য গোষ্ঠীর একটি পৌরাণিক পালায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন বাবলা। যদিও সে রাতেই মঞ্চনাটকের পর্দা নামে, কিন্তু বাবলার মনে গেঁথে যায় নাট্যনেশা।
সেই নেশাই তাঁকে এক বছরের মাথায় মির্জাপুর নাট্য গোষ্ঠীর সম্পাদকের আসনে বসায়। শুরু হয় তাঁর নাট্য পদযাত্রা—গ্রাম থেকে গ্রাম, শহর থেকে নগর, থিয়েটার থেকে বেতার-টেলিভিশন—সবখানেই তিনি হয়ে ওঠেন দরদী নাট্যযাত্রী।
একসময় ভিজ্যুয়াল নির্মাণের প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয় তাঁর। প্রথম নির্মাণ করেন “অবুঝ ভালোবাসা” নামে টেলিফিল্ম। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন চট্টলার জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকা সুজন, আর বাবলা নিজেই অভিনয় করেন সুজনের ছোট ভাইয়ের চরিত্রে। একঝাঁক চট্টগ্রামের তারকার অভিনয়ে এই টেলিফিল্মটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এরপর আরও কয়েকটি টেলিফিল্ম নির্মাণ করেন বাবলা, যার কোনোটিই ফ্লপ হয়নি।
এই সময়েই ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে চট্টল থিয়েটারের কর্ণধার শওকত ইকবালের সঙ্গে। শওকত ইকবালের টিভি প্রযোজনায় নিয়মিত কাস্ট পেতে থাকেন বাবলা বড়ুয়া। প্রতি ঈদে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ও শেফালী ঘোষের কালজয়ী গানকে ভিন্নমাত্রায় চিত্রায়ণ করেন শওকত, যেখানে বাবলা নিয়মিত পারফর্ম করেন। টিভি পালা “কমলা সুন্দরী” ও নবীন পালাকার জসিম মুহাম্মদ রুশনীর “রঙমহল” বাবলার অভিনয় ও নির্দেশনার উজ্জ্বল নিদর্শন।
গ্রামে বড় হওয়া বাবলা বড়ুয়া নিজ গ্রাম গুমানমর্দনের বৈশাখী মেলার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিগত কয়েক বছর ধরে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক সহযোগিতায় বোয়ালিয়া বটমূলের এই বৈশাখী মেলা এখন উত্তরোত্তর জাঁকজমকের সাথে উদযাপিত হয়।
বর্তমানে তাঁর বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে, কিন্তু চিরসবুজ এই নাট্যশিল্পী এখনও নাটকের ঘেরাটোপে ডুবে আছেন। এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নাট্যজন সুদর্শন চক্রবর্তী উত্তম কুমার (লেডা মিয়া), নাট্যকার অরবিন্দু চক্রবর্তী, গৌরাঙ্গ দাশ ও শওকত ইকবালের প্রতি। নাট্যসহযোদ্ধা জসিম রুশনীকে তিনি একজন শক্তিমান ও গুণী অভিনেতা হিসেবে মূল্যায়ন করেন।
আপাদমস্তক একজন অভিনয়শিল্পী বাবলা বড়ুয়া আমৃত্যু অভিনয়ের মধ্যেই থাকতে চান বলে জানান। সেই সঙ্গে তাঁর সকল দর্শক, শ্রোতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতিও তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথেও নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।